রাজধানীর চারটি ক্যাসিনোতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে একযোগে অভিযান চালায় র্যাবের মোট পাঁচজন ম্যাজিস্ট্রেট। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্যাসিনোতে অভিযান এবারই প্রথম। ৬০ ক্যাসিনোর তালিকা নিয়ে বৃহস্পতিবারও চলতে পারে অভিযান। র্যাবের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার অভিযান চালাতে পারে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট।
Advertisement
বৃহস্পতিবার সকালে এমনটিই ইঙ্গিত দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
র্যাব জানায়, বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত ঢাকার মোট চারটি ক্যাসিনোতে একযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। এতে গ্রেফতার হয়েছে মোট ২০১ জন। এর মধ্যে মতিঝিলের ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে ২৪ লাখ ২৯ হাজার নগদ টাকাসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। কাউকে না পেয়ে ক্যাসিনোটি সিলগালা করা হয়।
র্যাব আরও জানায়, মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ ২৭ হাজার টাকা, ২০ হাজার ৫০০ জাল টাকাসহ ক্যাসিনোটি গুড়িয়ে দেয়া হয়। গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬০০ টাকাসহ ক্যাসিনো পরিচালনা ও খেলার অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া এ অভিযানে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার মোট ২০১ জনের মধ্যে ৩১ জনকে ১ বছর করে এবং বাকিদের ৬ মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট।
Advertisement
এছাড়া অবৈধ ক্যাসিনোর মালিকানা, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র বহন করার অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানার পাশেই ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে অভিযানের পর থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সব জেনেও কেন চুপ করে ছিল, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, সে বিষয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার তারা ঢাকার ক্যাসিনো গুড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
সকালে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা, ক্যাসিনো চলতে দেয়া হবে না। এসব জুয়ার বোর্ড, ক্যাসিনো পরিচালনা ক্ষেত্রে যতো প্রভাবশালীরাই জড়িত থাকুক না কেন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র্যাব অভিযান শুরু করেছে পুলিশও করবে। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার জুয়ার বোর্ড ও ক্যাসিনোর তালিকা করা শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি এই সপ্তাহেই কমিশনার হিসেবে কাজ শুরু করেছি। যারা এই বিষয় দেখেন তাদের নির্দেশ দিয়েছি, কোথায় কী হচ্ছে, কারা পরিচালনা করছে তা তালিকা করে জানাতে। তারা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে একটি জোনের তালিকা আমি পেয়েছি। অন্য জোনের তালিকাও করা হচ্ছে। র্যাব যেমন অভিযান শুরু করেছে তেমনি পুলিশের ভূমিকাও একই রকম। স্পষ্ট করে বলছি, রাজধানীর কোথাও জুয়ার বোর্ড কিংবা ক্যাসিনো চলতে দেয়া হবে না।
Advertisement
কমিশনারের এই ঘোষণার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন জোনে অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছেন থানা পুলিশের সদস্যরা। সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা বা রাতে এই অভিযান শুরু হবে। তবে অভিযানকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে ক্যাসিনোর মালামাল সরিয়ে অন্যত্র চলে যেতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।
অভিযানের বিষয়ে আগাম কোনো কথা বলতে রাজী হননি র্যাব-পুলিশের সদস্যরা।
এআর/জেইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ