‘স্যার, প্রিজনভ্যান পোস্তগোলা ক্রস করছে, আমাদের টিম ফলো করছে, জেলগেটে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসবে। আমরা কি মুভ করবো?’
Advertisement
আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টায় রাজধানীর ফকিরেরপুলে ইয়াংমেন্স ক্লাব আঙিনায় দাঁড়িয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-৩) একজন উপ-পরিচালককে ক্যাসিনোতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে কেরানীগঞ্জ কারাগারের পথে থাকা প্রিজনভ্যানের আপডেট জানাচ্ছিলেন অধস্থন এক র্যাব সদস্য।
র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেট কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবেন। তার উপস্থিতিতে দরজা সিলগালা করে তবেই সবাই মুভ করব।’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, সাজাপ্রাপ্তদের নাম-ঠিকানাসহ তথ্য কারাগারে পাঠানোর আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। তখন থেকেই পর্যায়ক্রমে সাজাপ্রাপ্ত ১৪২ জনকে কারাগারে পাঠানো শুরু হয়। গত রাতে ক্যাসিনোতে গ্রেফতার হওয়া ১৪২ জনের মধ্যে ইয়াংমেন্স ক্লাবের ছয়জন কর্মচারীসহ ৩১ জনকে এক বছর এবং বাকিদের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
Advertisement
আজ সকালে সরেজমিন মতিঝিল ক্লাবপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল যে তিনটি (ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, ওয়ান্ডারার্স ও দিলকুশা) ক্যাসিনোতে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেগুলোর আশপাশে উৎসকু জনতার ভিড়। তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাসিনো দেখতে চলে এসেছেন।
স্থানীয় দোকানদার ও এলাকাবাসীর কাছে অনেকেই নাম, ঠিকানা ও ক্যাসিনো কীভাবে চলে, তারা দেখেছেন কি না ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করেন।
তাদের একজন শামসু মিয়া। মিরপুরের পল্লবী থেকে সকালে বাসে চেপে মতিঝিলে ছুটে এসেছেন। তিনি জানান, এককালে হাউজির নেশা ছিল। গত রাতে টিভিতে ক্যাসিনো শুনে দেখতে এলাম, এ জুয়া কীভাবে খেলে। কিন্তু র্যাব কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
গতকালের অভিযানে এ তিনটি ক্লাব বন্ধ হলেও অভিযানের ভয়ে এমনিতেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে মোহামেডান, আরামবাগ ও ভিক্টোরিয়া ক্লাব। মতিঝিলের তিনটি ক্লাবের একটিতে (দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব) গত রাতেই সিলগালা করা হয়। বাকি দুটোতে আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সিলগালা লাগানোর প্রস্তুতি চলতে দেখা যায়।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তারা এখনও বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, ক্ষমতাসীন দলের দোর্দণ্ড প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মালিকানায় পরিচালিত ক্যাসিনোতে এমন অভিযান চলতে পারে।
তারা বলেন, হাউজি, ক্যাসিনো ও মাদকের কবলে পড়ে এ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার যুবকরা নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই অজানা আশঙ্কায় সন্তানদের দেশের বাইরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছেন।
তবে ক্লাবপাড়ার এ ক্যাসিনোতে কয়দিন সিলগালা থাকবে, তা নিয়ে তারা সন্দিহান বলে জানান।
মতিঝিল ছাড়াও গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদ ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। আজ সকালে ক্লাবটিতে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা মারা। ক্লাবটিতে ১৫ জন আনসার সদস্য ডিউটি করেন। তাদের থাকার জন্য জায়গাটুকু ব্যতীত ক্লাবের ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার মতো মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় চোখে পড়েনি।
এমইউ/জেডএ/পিআর