রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাব ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধ অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
Advertisement
নথিভুক্ত হওয়ার পর ওই দুই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আজ বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানা গেছে। তবে সর্বশেষ দুপুর ১টা পর্যন্ত র্যাব-৩ হেফাজতে আটক খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছিল। র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-৩ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক অস্ত্র-গুলি ও মাদকসহ আটক খালেদকে বিকেলের মধ্যে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান বলেন, আটক খালেদ র্যাব হেফাজতে রয়েছেন। তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।
Advertisement
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসা নিয়ে আটক খালেদকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অস্ত্র আইনে গুলশান থানায় ও মাদক আইনে মতিঝিল থানায় পৃথক দুটি মামলা প্রস্তুতি চলছে। র্যাব বাদি হয়ে তার বিরুদ্ধে এ দুটি মামলা করবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে র্যাব। আটকের পর তাকে র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্রেফতারের সময় খালেদের বাড়ি থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, লকার থেকে ১০০০, ৫০০ ও ৫০ টাকার বেশ কয়েকটি বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। সেগুলো গণনার পর ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া ডলারেরও বান্ডিল পাওয়া যায়। টাকায় তা ৫-৬ লাখ টাকা হবে বলে র্যাব জানায়। এছাড়া তার কাছ থেকে মোট ৩টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। যার একটি লাইসেন্সবিহীন, অপর দুটি লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে রাখা হয়েছিল।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি সদর দফতরের কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।
Advertisement
সূত্র জানায়, খালেদের ক্যাসিনোর বিষয়ে পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সংস্থা এবং রাজনীতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জানতেন। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র্যাব।
এদিকে খালেদকে রাতে আটক ও ঢাকায় একের পর এক ক্যাসিনোর সন্ধানের সংবাদ দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন জেনেও কেন এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি? আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে এটা তাদের চরম ব্যর্থতা।
‘ঢাকায় ক্যাসিনো: ৮ লাখ টাকা হাওয়া এক শিক্ষার্থীর’ শিরোনামে ২০১৭ সালে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন করা হয়েছিল। সে সময় জাগো নিউজের কাছে পুলিশের রমনা বিভাগ, তেজগাঁও বিভাগ ও মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) তাদের এলাকায় ক্যাসিনো থানার কথা অস্বীকার করেছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে থাকা তালিকা অনুযায়ী এই ৩ বিভাগেই রয়েছে ক্যাসিনো।
এআর/জেইউ/এমএসএইচ/পিআর