জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘ঈদ সালামির নামে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করায় শাখা ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকি দেয়া এবং মুঠোফোনের সিমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই সাথে উপাচার্য বিরোধী সাতজন শিক্ষকের মুঠোফোনের সিমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
Advertisement
টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি সহ-শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নিয়ামুল হোসেন তাজ ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম মোল্লার মুঠোফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসেন এসব জানান। সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আজ আমাকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে কে বা কারা ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার হুমকি দেয়। তা না হলে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে বলেও জানানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’ এছাড়া মুঠোফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে উপাচার্য বিরোধী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষক তাদের মুঠোফোনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। অভিযোগকারী শিক্ষকদের তালিকায় রয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরিফ এনামুল কবীরসহ বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামিমা সুলতানা, অধ্যাপক তারেক রেজা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু।
Advertisement
এ বিষয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কণ্ঠরোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর যথোপযুক্ত প্রতিক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানাবে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘যাদের মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একগুয়েমিতার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এই অপরাধে রাষ্ট্র কখনো নাগরিকের কণ্ঠরোধ করতে পারে না। রাষ্ট্র তখনই কণ্ঠরোধ করতে পারে যখন সেটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আমার জানামতেযাদের মুঠোফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তারা কেউই এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত না।’
এছাড়া অর্থ কেলেঙ্কারি ফাঁস করা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হামজা রহমান অন্তরের রুমে আলাদা তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।
হামজা সভাপতি গ্রুপের দিকে অভিযোগ তুলে বলেন, আমি রাতে এসে দেখি আমার রুমের তালা ভেঙ্গে অন্য তালা লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং রুমের কিছু জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় তিনি নিরাপত্তহীনতায় রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।
Advertisement
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ হেল কাফী বলেন, যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে তাদের নিরাপত্তা হল প্রশাসন নিশ্চিত করবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘যারা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শুধু তাদেরকেই নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু যারা বর্তমান শিক্ষার্থী না, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনের না। আর হামজা রহমান অন্তরের বিষয়টি হল প্রাধ্যক্ষ দেখছেন।’
ফারুক হোসেন/এমআরএম