বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৪তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন ২২ সেপ্টেম্বর। শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। আট বছর আগে হওয়া কমিটি এখনও নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। এ নিয়ে বিপুল সংখ্যক কর্মীদের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
Advertisement
জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, এস্টোরিয়া, জ্যামাইকায় পাল্টা-পাল্টি হয়েছে সভা-মিছিল। গাড়ি পার্কিং নিয়ে হাতাহাতি থেকে হয়েছে মামলা পর্যন্ত। দলীয় পদ দেবেন বলে টাকা দশ হাজার ডলার নিয়েছেন এক নেতা। নিজের সংগঠনের কার্যালয় ভাংচুর করে দু’পক্ষের নেতাকর্মী গিয়েছেন জেলেও।
সংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মীরা এই সংকট এবং বিশৃঙ্খলার অবসান চায়। শেখ হাসিনাকে ২৮ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটনের ম্যারিয়ট মার্কুইজে প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমানে চলছে তর্কাতর্কি।
আওয়ামী পরিবার নামে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে সম্মেলনের দাবিতে নানা কর্মসূচি দেয়া হয়েছে ড. প্রদীপ করের নেতৃত্বে।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চায়লে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর নতুন কমিটি দেয়ার কথা। এত বড় সংগঠনকে তিনি ‘ওয়ান ম্যান শো’তে পরিণত করেছে। পারিবারিক সংগঠনে রূপান্তর করেছেন। যাকে ইচ্ছা কমিটিতে রাখছেন। যাকে ইচ্ছা বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কোনো কথা বলতে চাইলে ‘জয়মামা’র ভয় দেখান।’
তিনি বলেন, ‘সংগঠনের তহবিলের কোনো হিসেব নেই। অভিযোগ আছে তিনি অর্থের বিনিময়ে পদ দিয়েছেন। রাজাকারদের তিনি এই সংগঠনে ঠাঁই দিয়েছেন। তার চেয়ে অনেক বেশি নেতাকর্মী নিয়ে আমরা মিছিল-মিটিং করছি। শতশত কর্মী প্রতিনিয়ত ‘নো মোর সিদ্দিক নো মোর সিদ্দিক’ বলে প্রতিবাদ করছে। উনার লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করা উচিৎ ছিল। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্বের পরিবর্তন হোক। ’
কথা হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটি করে দিয়েছেন। এই কমিটিকে অমান্য করে নিজেদেরকে নিজে সভাপতি ঘোষণা করে নানা কর্মসূচি দিয়ে সংগঠন পরিপন্থী কাজ করছেন তারা। শেখ হাসিনার আদেশকে অমান্য করছেন। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। নিউ ইয়র্কে অন্তত এক হাজার কর্মী আছেন সক্রিয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের মধ্যে কেউ কেউ পদের জন্য, রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য দলে বিভক্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র মত প্রকাশের দেশ। কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে কিছু করে আমি বাধা দেয়ার পক্ষে না। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে মত প্রকাশের। জননেত্রীকে যে সংবর্ধনা দেয়া হবে তাতে অন্তত দেড় লাখ ডলার খরচ হবে? আমি কি কারো কাছ থেকে চাঁদা নিয়েছি?’
Advertisement
সভাপতি বলেন, ‘এই সময় কেন কেউ তহবিলের কথা তোলে না। আমি যাদেরকে সংগঠনে নতুন করে যুক্ত করেছি তা সংগঠনকে গতিশীল করার জন্যই করেছি। জয় মামার সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয় বলেই তার কথা বলি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে না রাখেন আমার কি এক মূহূর্ত পদ দিয়ে থাকার সামর্থ আছে?’
যুত্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন উপদেষ্টা ফেরদৌস খন্দকার বলেন, ‘আমরা বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মানুষ হয়ে থাকি, নেত্রী শেখ হাসিনার উপর যদি সবার আস্থা আর বিশ্বাস থাকে তাহলে এই কোন্দল কেনো? আমি মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তাই নতুন করে সক্রিয় হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আসার আগে এই ধরনের বিশৃঙ্খলা আর বিভক্তি করে লোক হাসানোর কোনো মানে হয় না। শেখ হাসিনা আসার পরে তিনি যা বলবেন তাই আমরা মাথা পেতে নেব?’
২৮ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশিত সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি এখানে করার কোনো মানে নাই। মূল ধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে নিজের দেশকে তুলে ধরতে পারলে এটা হবে কাজের কাজ। এখানে সময়-অসময়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করে সভা-মিছিল মিটং করে আমরা নিজেদেরকে অসভ্য জাতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কাছে তুলে ধরছি। এটা ঠিক না।’
এমআরএম