ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ফওজিয়া রেজওয়ানকে নিয়োগ কেন অবৈধ নয় তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। তবে চূড়ান্ত রুল শুনানি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার কর্মস্থলে যোগদানে বাধা নেই বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ফওজিয়া রেজওয়ানকে ভিকারুননিসায় যোগদান থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
Advertisement
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ এ সংক্রান্ত এক রিট দায়ের করেন। রিটে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ফওজিয়া রেজওয়ানকে নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।
অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ বলেন, আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু আইন লঙ্ঘন করে সরকার নিজেই অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে। এ কারণে রিট করেছি।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার সবুজবাগ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনরত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফওজিয়া রেজওয়ানকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার।
নিয়োগ আদেশে বলা হয়, সরকারের প্রচলিত বিধি-বিধান ও আদেশ অনুসারে তার চাকরি নিয়ন্ত্রণ হবে। তিনি নিজ বেতনক্রম অনুযায়ী বেতন-ভাতা গ্রহণ করবেন এবং পদ সংশ্লিষ্ট ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
Advertisement
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিনা ভাড়ায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করলে তিনি কোনো বাড়িভাড়া ভাতা পাবেন না। সরকারি বাসায় বসবাস করলে বাড়ি ভাড়াসহ যাবতীয় সরকারি পাওনা নিজ দায়িত্বে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দেবেন।
তিনি স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বাধ্যতামূলক ভবিষ্যৎ তহবিল, গোষ্ঠী বীমা ও অন্যান্য তহবিলে চাঁদা দেবেন এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী তার লিভ স্যাল্যারি ও পেনশনের চাঁদা দেবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছর বেইলি রোডের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে ভিকারুননিসার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষককে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব চালিয়ে আসছেন কলেজ শাখার সহকারী অধ্যাপক হাসিনা বেগম। তিনি অর্থনীতি বিষয়ের শিক্ষক। এরপর গত এপ্রিলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হলেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তা বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আদালতে আবেদনটি দায়ের করেন ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনুস আলী আকন্দ।
আইনজীবী বলেন, ১৯৭৯ সালের রেগুলেশন ২ (এ) (ই), ৩ (১) (২) অনুযায়ী, অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষমতা গভর্নিং বডির এবং ২০০৯ সালের রেগুলেশন ৪১ (২) (খ) (৪) অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা গভর্নিং বডির। কিন্তু সরকার অবৈধ ক্ষমতা ব্যবহার করে মাউশির একজন কর্মকর্তাকে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়।
আবেদনে ফওজিয়াকে নিয়োগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না -এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় প্রজ্ঞাপন স্থগিত চাওয়া হয়েছে। এছাড়া তার কার্যক্রমের ওপরে স্থিতাবস্থা জারিরও আর্জি জানানো হয়।
আবেদনে ফওজিয়াকে নিয়োগ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ হবে না-এ মর্মে রুল জারির আরজি জানানো হয়। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় প্রজ্ঞাপন স্থগিত চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার কার্যক্রমের ওপরে স্থিতাবস্থা জারিরও আরজি জানানো হয়।
রিটে শিক্ষা সচিব, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ, অ্যাডহক কমিটির চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
২০১৯ সালে করা এক রিট আবেদনের অংশ হিসেবে এ সম্পূরক আবেদন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ফওজিয়াকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এফএইচ/এসএইচএস/পিআর