বিনোদন

অভিনেতাকে ভালো মানুষ হতে হবে

এই সময়ের তরুণ অভিনেতা সুজাত শিমুল। মঞ্চ , টেলিভিশন এবং বিজ্ঞাপনচিত্রে তার অভিনয় শৈলী দর্শকদের মুগ্ধ করেছে অনায়াসে। অভিনয় করছেন চলচ্চিত্রেও।মঞ্চে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রায় এক দশকেরও বেশি। মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ২০০২ সালে, চট্টগ্রামে। বর্তমানে কাজ করছেন ঢাকায় আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে। এছারাও কাজ করে চলেছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। কথা হলো তার সঙ্গে। লিখেছেন লিমন আহমেদজাগো নিউজ : বর্তমানে কি নিয়ে ব্যাস্ত আছেন ?শিমুল : এখন পুরো ব্যস্ততা যাচ্ছে ঈদের নাটকের শুটিং নিয়ে। প্রতিদিনই নানা লোকেশনে ছুটতে হচ্ছে কাজের জন্যে। পাশাপাশি চলতি ধারাবহিক নাটকগুলো তো আছেই। এইবারের কোরবানির ঈদে নাটক টেলিফিল্ম মিলিয়ে প্রায় ১৭ টি কাজ করছি। এই ছাড়াও মঞ্চের ব্যাস্ততা তো আছেই।জাগো নিউজ : অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে..?শিমুল : ২০০১ সালের কথা। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার বন্ধু নাজিমের পরামর্শে চট্টগ্রাম শিল্পকলায় গিয়েছিলাম আবৃত্তি শিখতে। যেই ইচ্ছে সেই কর্ম। সুযোগ ঘটে প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সঙ্গে কাজ করার। তারপর এক সময় আবৃত্তি চর্চার পাশাপাশি মঞ্চ নাটকের প্রতি জাগে প্রবল আগ্রহ। শিল্পকলার মঞ্চে গেলাম নাটক দেখতে। নাটকে রক্ত মাংসের মানুষের সঙ্গে মানুষের যে যোগাযোগ তা দেখেই মূলত মঞ্চ নাটকের প্রতি আগ্রহটা জাগে।জাগো নিউজ : মঞ্চের শুরুর গল্প বলেন..?শিমুল : সময়টা সম্ভবত ২০০৫’র দিকে। আরণ্যক নাট্যদলে অভিনয় বিষয়ক একটি কর্মশালার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমার মঞ্চের পথচলা। তারপর কাজ করি চট্টগ্রামের নাট্যাধার নাট্যদলের সঙ্গে। আনন জামানের রচনা ও মোস্তফা কামাল যাত্রার নির্দেশনায় শিখন্ডি কথা নাটকের মধ্য দিয়ে আমার মঞ্চে অভিষেক। নাটকে শ্যামা হিজড়া নামের একটি চরিত্রে আমি প্রথম পূর্ণাঙ্গ অভিনয় করি। শুরুতেই চরিত্র নির্মাণের এক কঠিন চ্যালেঞ্জেরে মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমার নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের দিক নির্দেশনায় কাজ করে চলেছি। দলের হয়ে প্রথম অভিনয় করি এবং বিদ্যাসাগর, রাঢ়াং, ইতি ইয়োকাস্তে, পুতুল কথন, আগুনের ডালপালা, ভঙ্গ বঙ্গ এবং কবর নাটকে। বর্তমানে দলের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।জাগো নিউজ : মঞ্চের প্রতি আপনার দৃষ্টি ভঙ্গি কি?শিমুল : এক কথায় মঞ্চ একজন শিল্পীর জন্য পুণ্যের জায়গা। আমার প্রথম অভিনয়ের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি মঞ্চে দাঁড়ানোর পর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের সঞ্চালন নিয়ে কি যে আড়ষ্টতা! তারপর সংলাপ প্রক্ষেপণের বিষয়টি তো আরো একটি কঠিন ব্যাপার ছিল। তারপর এক সময় সব প্রতিকূলতা কেটে যায়। তৈরি হয় এই মঞ্চের প্রতি নিবির ভালবাসা। এভাবে মঞ্চও ধীরে ধীরে আপন করে নেয় শিল্পীকে। শুরু হয় শিল্পী ও মঞ্চের মধ্যে গভীর সখ্যতা। সর্বোপরি একজন সৃজনশীল ও শক্তিমান অভিনেতা নিজেকে গড়ে তুলতে মঞ্চের ভূমিকা অনস্বিকার্য।জাগো নিউজ : একজন অভিনয় শিল্পীর কি কি গুণাবলী থাকা দরকার বলে আপনি মনে করেন..?শিমুল : একজন অভিনেতার মধ্যে কঠিন শৃঙ্খলা এবং মানবিকতা- এই দুটি গুণাবলী থাকা একান্ত বাঞ্চনীয় বলে আমি মনে করি। স্তানিস্লাভস্কীর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে- ‘এন এ্যাক্টর মাষ্ট বি নেসেসারিলি এ গুড ম্যান।’ অভিনেতাকে সত্যিই একজন ভালো মানুষ হতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তিনি আরোও বলেছেন, অভিনেতাকে কঠিন শৃঙখলার মধ্য দিয়েও চলতে হবে।জাগো নিউজ : আপনি তো বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন?শিমুল : বিজ্ঞাপনচিত্রের অভিনয় করাটা একেবারে হুটহাট করে হয়ে যাওয়া। বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয় কিংবা মডেল হওয়া এসব কখনো আমার ভাবনার মধ্যে ছিল না। একদিন হঠাৎ রবির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অডিশনের ডাক পড়লো। অডিশনে টিকেও গেলাম। শেষ পর্যন্ত সেই বিজ্ঞাপনে অভিনয় করলাম। ব্যাস, আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেলো। তারপর একে একে বিকাশ, সফট ড্রিংকস, গাজী সিএনজি টায়ার, সরকারি বিজ্ঞাপনসহ বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি। সম্প্রতি আরো দুটি বিজ্ঞাপনচিত্রের শুটিং শেষ করলাম।জাগো নিউজ : টেলিভিশনে অভিনয় কখন থেকে শুরু?শিমুল : টেলিভিশনের আগে আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই চলচ্চিত্রে। সম্ভবত ২০০৮ এর কথা। গুরু ভাই সিনেমায় পুলিশ অফিসারের চরিত্রে আমার প্রথম অভিনয়ের সুযোগ ঘটে। টেলিভিশনে প্রথম অভিনয় করি ২০০৯ সালে। মামুনুর রশিদের একটি নাটকে। তারপর একে একে বাড়তে থাকে কাজের কলেবর। এ পর্যন্ত অভিনীত এক ঘন্টার নাটকের সংখ্যা প্রায় ১৫০’রও বেশি। আর ধারাবাহিক নাটকের সংখ্যা প্রায় ৫০টি।জাগো নিউজ : চলচ্চিত্রে নতুন খবর আছে?শিমুল : হুম! খবর আছে।..হা..হা..। সম্প্রতি দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছি। একটি তৌকির আহমেদের পরিচালনায় ‘অজ্ঞাতনামা’ আর অন্যটি ওয়াহিদ তারেকের পরিচালনায় ‘আলগা নোঙর’। দু’টি সিনেমায় আমি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি।জাগো নিউজ : বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে?শিমুল : বর্তমানে চারটি ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছি। মামুনুর রশীদের অক্ষয়, অঞ্জন আইচের সাপলুডু, শামীম জামানের আনন্দ গ্রাম, রেদোয়ান রনির ঝালমুরি উল্লেখযোগ্য। ঈদের পরে শুটিং শুরু হবে আরো দুটি ধারাবাহিক নাটকের।জাগো নিউজ : আপনি তো আবৃত্তিও করেন। আবৃত্তির খবর কি?শিমুল : খুব ভাল। বর্তমানে স্বরচ্চিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের হয়ে কাজ করছি। নিয়মিত আবৃত্তি চর্চাটা হয়তো কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে, চেষ্টা করে যাচ্ছি সব সময় আবৃত্তি চর্চার সাথে থাকতে। মাঝে মাঝে মঞ্চে উঠি। এই আর কি!জাগো নিউজ : ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?শিমুল : জীবনে আমার খুব বেশি কিছু চাওয়া নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিল্পের চর্চাটা নিবিড়ভাবে করে যেতে চাই। শিল্পের এই চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। একজন ভালো মানুষ হিসেবে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে মরতে চাই।এলএ

Advertisement