কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ২৫ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে রতন মিয়া নামে মানসিক প্রতিবন্ধী এক ব্যক্তিকে। একটি ছোট্ট অন্ধকার ঘরের মেঝেতে লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় চলছে তার খাওয়া, ঘুম, পেশাব-পায়খানা সবই। এ দীর্ঘ সময়ে একটি বারের জন্যও তাকে নেয়া হয়নি কোনো হাসপাতালে।
Advertisement
স্বজনদের দাবি- তাকে ২৫ বছর আগে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। অন্যের ক্ষতি করতে পারে এমন ভয়ে তাকে নির্জনে বেঁধে রাখা হয়েছে।
তবে এলাকার অনেকে বলছেন, গ্রামের এক ব্যক্তি রতনের মাথায় আঘাত করেছিলেন। ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ব্যক্তিকে পাল্টা আঘাত করতে যাওয়ার পর থেকে তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে রতন মিয়া। এক সময়ের গ্রামের টগবগে যুবক রতনের জীবনের অর্ধেক সময় কেটে গেছে অন্ধকার কক্ষে শিকলবন্দি হয়ে। ঘরের বারান্দায় একটি ছোট্ট কক্ষে সিমেন্টের পিলারে মোটা লোহার শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে ২৫ বছর ধরে তার দুর্বিষহ জীবন কাটছে।
Advertisement
স্বজনরা জানান, তিন ভাই ও এক বোনের সংসারে রতন ছোট। বাবা-মা ও মেঝো ভাই বেঁচে নেই। প্রায় ২৫ বছর আগে গরু ফসল নষ্ট করাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার এক ব্যক্তি তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর থেকেই তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসা না করিয়ে গোপনে ঘরের বারান্দায় একটি নির্জন আলো-বাতাসহীন কক্ষে শিকলে বেঁধে রাখেন তার এক মাত্র বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া। সেই থেকে চলছে তার বন্দি জীবন।
অনেকের ধারণা, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ছোট ভাইকে বঞ্চিত করার জন্যই তাকে কৌশলে পাগল বলে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
তবে তার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়ার দাবি- রতন মানসিক ভারসাম্যহীন। লোকজনের ক্ষতি করতে পারে। এ জন্য তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বাবার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য ছোট ভাইকে বেঁধে রাখার অভিযোগ সত্য নয়। এলাকার লোকজন অনেক দিন ধরেই জানেন রতন পাগল।
এলাকার কেউ কেউ জানান, রতন অনেকের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। ২৫ বছরে আগে যে প্রতিবেশী তার মাথায় আঘাত করেছিলো, তাকে পাল্টা আঘাত করতে যাওয়ার পরই তার ভাগ্যে জুটেছে এমন নির্মমতা। কোথায় তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল তা জানে না কেউ।
Advertisement
এলাকার অনেকেই জানান, , রতন মিয়া আর দশজন ছেলের মতোই সুস্থ ও সবল ছিল। প্রায় ২৮ বছর আগে তাদের জমিতে পাশের বাড়ির হযরত আলীর একটি গরু ধান খাচ্ছিল। রতন মিয়া ওই গরুটি ধরে বাড়ি নিয়ে আসছিল। এ সময় হযরত আলী দৌড়ে এসে রতন মিয়ার হাত থেকে গরুটি নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এ সময় হযরত আলী লাঠি দিয়ে রতন মিয়ার মাথায় সজোরে আঘাত করে। এতে রতন মিয়ার মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। পরে স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিছুদিন পর রতন মিয়া অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন।
রতনের পরিবারের দাবি- তাকে ওই সময় মানসিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কবে, কোথায় তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল তা মনে নেই বলে জানান রতনের বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া। হযরত আলীকে পাল্টা আঘাত করতে যাওয়ার পর থেকেই তাকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে
এদিকে সাংবাদিকদের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর রতনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.নাহিদ হাসান।
তিনি বলেন, বিষয়টি অমানবিক। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। মঙ্গলবার শিকলবন্দি রতনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হতে পারে বলে জানান ইউএনও নাহিদ হাসান।
নূর মোহাম্মদ/আরএআর/পিআর