বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ‘টাওয়ার-৭১’ ও ‘জয়বাংলা’ নামে দুটি ভবন নির্মাণে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গঠিত সংসদীয় উপ-কমিটিকে অভিযুক্ত কোম্পানির পক্ষ থেকে বিমানের টিকিট দিতে চাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। এজন্য কমিটি বলেছে, এতেই প্রমাণিত হয় এইসব দুর্নীতির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মকর্তারাও জড়িত।
Advertisement
জানা গেছে, এ ভবন দুটির কাজ ২০১৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বিভিন্ন সময়ে জরিমানা করাসহ টাওয়ার-৭১ প্রকল্পের কাজ গত ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। যদিও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মদিনা ডেভেলপমেন্টস এখনো ভবন বুঝিয়ে দেয়নি। কয়েক দফা চিঠি দেয়ার পরও জরিমানার ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা পরিশোধ করেনি। ‘জয়বাংলা বাণিজ্যিক ভবনের’কাজ দেরি হওয়ায় গত জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। কাজের দায়িত্বে থাকা ওডিএল-এমআরএম-ইসি-জেভি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ২৫ টাকা জরিমানাও করা হয়। সেই টাকা এখনো দেয়নি তারা।
২৯ তলা টাওয়ার-৭১ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ৩৬ নম্বর প্লটের ওপর নির্মাণাধীন ‘জয়বাংলা’ সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদকে আহ্বায়ক করে দুই সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির অন্য সদস্য হলেন স্থানীয় সাংসদ মইন উদ্দিন খান বাদল। এ দুজনই মুক্তিযোদ্ধা। ২৪ জুলাই উপ-কমিটির সেখানে যাওয়ার কথা থাকলেও যাওয়া হয়নি।
সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কাজী ফিরোজ রশীদ এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ফিরোজ রশীদ বলেন, আমি নির্দিষ্ট তারিখে পরিদর্শনের জন্য যাতায়াতসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের এমডিকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কোনো ফান্ড নাই। ট্রাস্ট থেকে কোনো খরচ দেয়া সম্ভব নয়। কিছুদিন পরে ট্রাস্টের এমডি জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিমানের একটি টিকিটের ব্যবস্থা করেছে। আমি খুব আশ্চর্য হই। যার বিরুদ্ধে তদন্ত করব, তার ব্যবস্থাপনাতে কীভাবে যাব? আমি ব্যক্তিগত খরচে টিমকে নিয়ে যেতে পারি। কিন্ত সেটাতে অতি আগ্রহ প্রকাশ পেতে পারে।
Advertisement
পরে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টাকায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে যাওয়ার প্রস্তাব এমডি সাহেবের পক্ষ থেকে দেয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।‘
তিনি বলেন, এই প্রস্তাব দেয়া প্রমাণ করে কোনো না কোনোভাবে ট্রাস্ট বা তাদের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক রক্ষা করা হচ্ছে।
ওই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল ইসলাম খান উপস্থিতি থাকলেও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি বলে সূত্র জানায়।
পরে ট্রাস্টই এই ব্যয়ভার বহন করবে এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে অচিরেই পরিদর্শনের সকল ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
Advertisement
এইচএস/এসআর/জেআইএম