কাতালোনিয়ার জাতীয় দিবস ‘লা দিয়াদা’ ১১ সেপ্টেম্বর। প্রতিবছরের মতো এবারও দিবসটি পালন করেছে দেশটির কাতালানপন্থী জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী জনগণ। দিবসটি উপলক্ষে রাজধানী বার্সেলোনা শহরের প্লাসা ইস্পানিয়াতে প্রায় ৬ লাখ মানুষ জড়ো হয়।
Advertisement
তবে এবারের জাতীয় দিবসে বিগত ৭ বছরের তুলনায় সবচেয়ে কম জনসমাগম হয়েছে। স্পেনের সবচেয়ে বড় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘গোয়ারদিয়া উরবানা’র দেয়া তথ্য অনুসারে, কাতালোনিয়ার এবারের জাতীয় দিবসে উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬ লাখ মানুষের। এই একই সংস্থার গণনা অনুসারে গত বছর (২০১৮) এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি। এবার মানুষের উপস্থিতি ছিল গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ লাখ কম।
১৭১৪ সালে স্পেনের রাজা পঞ্চম ফিলিপের বাহিনীর কাছে বার্সেলোনার পরাজয় ও অঞ্চলটির স্বাধীনতা হারানোর ঘটনা স্মরণ করে দিনটিতে আঞ্চলিক ছুটি ও জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়। ২০১২ সাল থেকে দিনটিকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামীরা স্বাধীনতার আন্দোলন হিসেবে বেছে নিয়েছে।
এবারের জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে সকাল থেকে আকাশী রঙের টি-শার্ট পরিধান করে, কাতালোনিয়ার জাতীয় পতাকা গায়ে জড়িয়ে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে কাতালান জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা রাজধানী বার্সেলোনার সড়কগুলোতে জড়ো হতে থাকে। বিকেল পর্যন্ত বার্সেলোনা শহরের প্রাণকেন্দ্র প্লাজা ইস্পানিয়াকে কেন্দ্র করে আশপাশের আভেনিদা পারালেল, আভেনিদা মারিয়া ক্রিস্টিনা, তারাগোনা, গ্রানভিয়াসহ আশেপাশের বৃহৎ সড়কগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ সময় কাতালান স্বাধীনতাপন্থীরা তাদের আটক নেতাদের মুক্তি, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে দেবার জন্য খণ্ড মিছিল ও স্লোগান দিতে থাকে।
Advertisement
দিনের শুরুতে সকালে মিকেলতেস দে কাতালোনিয়ার (কাতালোনিয়ার চলমান ইতিহাস নিয়ে কাজ করে এবং ১৭১৪ সালে কাতালান সৈন্য, মিলিশিয়া বাহিনীর স্মরণে কাজ করে এমন একটি সংগঠন) পক্ষ থেকে কাতালান প্রেসিডেন্ট কিম তোররাকে অভিনন্দন জানিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এছাড়া সকালের কমসূচীতে ছিল কাতালান প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের স্মৃতিসৌধ রাফায়েল দে কাসানোভায় পুষ্পস্তবক অর্পণ।
এ সময় কাতালান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট রোজের টররেন্ট এবারের জাতীয় দিবসটিকে ‘সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বন্দী অস্তিত্বের জানান দানকারী’ দিবস হিসেবে উল্লেখ করেন।
জাতীয় দিবসটিকে পালনের জন্যে কাতালোনিয়ার ৪টি প্রদেশ থেকে বার্সেলোনা শহরের গণসমাবেশে আসা সবাইকে এক বিবৃতির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান বার্সেলোনার পুননির্বাচিত মেয়র আদা কোলাও।
পরে দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কাতালোনিয়ার ৪টি প্রদেশ থেকে বড় বড় বাসসহ অন্যান্য পরিবহনে আসা লোকজন প্লাসা ইস্পানিয়াকে কেন্দ্র করে গণসমাবেশ ও কাতালান জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার দাবিতে একাগ্রতায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় খণ্ড খণ্ড হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে ছিল মানববন্ধন, মানব স্তম্ভ তৈরি, পথসভা ইত্যাদি। পরে সন্ধ্যায় স্বাধীনতাকামীদের সৌজন্যে বিশেষ কনসার্ট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Advertisement
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অঞ্চল কাতালোনিয়া। স্পেন থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর স্বাধীনতা ঘোষণা করে অঞ্চলটি। স্পেনের সংবিধানের ১৫৫ নম্বর ধারা মোতাবেক কাতালোনিয়ার ওপর সরাসরি শাসন জারির কথা ওঠে। ওই ধারা অনুযায়ী কাতালোনিয়ার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারবে মাদ্রিদ সরকার।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একটি দল কাতালান জাতীয়বাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে দিবসটি পালন করেন। কাতালোনিয়ার বামপন্থী দল এসকেররা রেপুবলিকানা দে কাতালোনিয়ার বাংলাদেশ বিষয়ক সমন্বয়ক সালেহ আহমেদের নেতৃত্বে অংশ নেয়া উক্ত দলে বাংলাদেশিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইআরসি সদস্য জাহাঙ্গির আলম, আবুল কালামসহ অন্যান্য বাংলাদেশি নেতৃবৃন্দ।
এমএসএইচ/এমএস