দেশের অন্যান্য সংস্থার তুলনায় বেতন কাঠামো কম হওয়ায় মেধাবীরা থাকছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে। এখানে নিয়োগ পেলেও বেশি সুবিধা পেয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। বিমানের এডমিন শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত বছর বিমানের অ্যাকাউন্টস, কমার্শিয়াল ও এডমিন বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয় ১১৯ জন কর্মচারী। ম্যানেজমেন্ট এন্ট্রি লেভেলের এসব তরুণ কর্মীর বেতন কাঠামো ধরা হয় গ্রুপ ৩ (২) অনুযায়ী, যা সব মিলিয়ে মাসে ২৫ হাজার ২০০ টাকা (মূল বেতন ১২,৫০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৭,৫০০ এবং অন্যান্য ভাতা ৫,২০০ টাকা)।
তবে দেড় বছর না পেরোতেই চাকরি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন ৪৯ জন। মূলত স্বল্প বেতন ও অন্যদের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় বিমানের চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন তারা।
জানা গেছে, বিমানের হিসাব বিভাগে গত বছর অ্যাকাউন্টস এসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান ৪১ জন। তবে বেতন কাঠামোয় হতাশ হয়ে এরই মধ্যে চাকরি ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন ১৮ জন। একই সংকট তৈরি হয়েছে বিমানের কমার্শিয়াল ও এডমিন বিভাগেও। গত বছর জানুয়ারিতে কমার্শিয়াল এসিস্টেন্ট হিসেবে বিমানে নিয়োগ পান ৫৫ জন। তবে ১ বছর ৮ মাস পেরোতেই চাকরি ছেড়ে দেন ২১ জন। আর গত বছর সেপ্টেম্বরে এডমিন এসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ২৩ জনের মধ্যে বিমান ছেড়ে গেছেন ১০ জন।
Advertisement
গত বছর নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী বিমানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বর্তমান সময়ে সরকারি অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বিমানে জব সুইচ করার হার বেশি।
তারা বলছেন, একই প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি পাস একজন স্টুয়ার্ডের বেতন দেশসেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা একজন গ্রুপ ৩(২) এর থেকে বেশি। আবার উচ্চ পদে (গ্রুপ সিক্সে) নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম করা হয়েছে। আগে ৭০ শতাংশ নিয়োগ অভ্যন্তরীণ কর্মীদের মধ্য থেকে হয়ে আসলেও নতুন নিয়মে সেটা ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বাকি ৭০ শতাংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নেয়া হবে বাইরে থেকে। এর মাধ্যমে বিমানে কর্মরত নবীনদের ভবিষ্যৎ ধূলিসাৎ করা হয়েছে, যা বিমানের চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার আরও একটি কারণ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারহাত হাসান জামিল এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আমাদের বিধি-বিধান মেনেই নিয়োগ দেই। বেতন কাঠামো পরিবর্তনের বিষয় বোর্ডে আলোচনা করবো।
তিনি বলেন, দক্ষ কর্মী ধরে রাখা বিমানের জন্য প্রয়োজন।
Advertisement
উল্লেখ্য, অব্যাহত লোকসান থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়ে জনবল কমিয়ে আনাসহ চারটি শর্তে বিমানকে ২০০৭ সালের ২৩ জুলাই কোম্পানি করা হয়। ওই বছর ৩০ জুন পর্যন্ত স্থায়ী জনবল ছিল ৪ হাজার ৫৯৯ ও অস্থায়ী (ক্যাজুয়াল) ৭৫৬ জনসহ সর্বমোট ৫ হাজার ৩৫৫ জন। একই বছর ৩১ ডিসেম্বর তা দাঁড়ায় স্থায়ী জনবল ২ হাজার ৭৯২ জনে, অস্থায়ী ১ হাজার ৪২৩ জনসহ সর্বমোট ৪ হাজার ২১৫ জন। এর পর টানা ১২ বছর বিমানে বড় ধরনের কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময়ে চুক্তি ভিত্তিতে অল্প কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেয় বিমান।
আরএম/জেডএ/জেআইএম