ধর্ম

ধর্মীয় অনুশাসনেই জীবনমান উন্নত হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ায়

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কারণেই দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। দেশটি বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বড় দেশ। ইসলামি শরিয়া মোতাবেক নিজেদের পরিচালনা করেই অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

Advertisement

ইসলামিক অর্থনীতি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে হালাল খাবার পরিবেশনা, ধর্মীয় পোশাকে ফ্যাশন, সঠিক নিয়মতান্ত্রিক বৈধ আবাসন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার কারণেই ব্যবসা-বাণিজ্যেও চাঙ্গা হয়ে উঠছে ইন্দোনেশিয়া। জিডিপি বৃদ্ধিতেও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব পড়ছে।

ধর্মীয় অনুশাসনে অর্থনীতিতে উন্নতির প্রভাব সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে ইন্দোনেশিয়ার এমটিভির সাবেক কর্মকর্তা জকি অরি অ্যার্ন্টু বলেন-‘তিনি নিয়মিত মদ পান করতেন, জিন্স পরতেন, চুল স্পাইক করতেন; বলতে গেলে নামে মাত্র মুসলমান ছিলেন তিনি। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা অনলাইনে ধর্মীয় জীবনাচার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা ও দাওয়াতি কাজ করেন। যার ফলে জকি অরি নিজেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, শালিন পোশাক ও জীবনাচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। যার ফলে তার নিজের অর্থনীতিতেও পরিবর্তন ও উন্নতি হচ্ছে।’

জরি অরি অন্টুং আরও বলেন, ‘ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সার্বিক বিষয়গুলো মাথায় রেখেই আবাসন থেকে শুরু করে ব্যাংকিংখাত পর্যন্ত ইসলামি শরিয়ায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। আর এত ব্যাপক সাড়া মিলছে। কেননা ইন্দোনেশিয়ার ২১৫ মিলিয়ন মুসলিম ঐতিহ্যগতভাবেই ধার্মিক। আর তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে স্থানীয় রীতিনীতিগুলোর সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে৷

Advertisement

অলাভজনক শরিয়াহ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অডি সেতিয়াদির মতে, ‘ধার্মিক লোকদের সংখ্যা এখন বাড়তে থাকায় ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থানকারী সংস্থাগুলোও ইসলামিক ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং পদ্ধতি বেছে নিয়েছে৷

হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় হালাল প্রশংসাপত্র সুরক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চলছে। তারা বুঝাতে চায় যে, তারা খাবার ব্যবস্থাপনায় ইসলামি আইন মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছে।

এমনকি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ব্যবসায় জড়িতরাও তাদের ভোক্তাদের এ কথার জানা দিচ্ছে যে, তারা হালাল প্রক্রিয়া ও উপাদানে তৈরি ওষুধই তাদের হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে ব্যবহার করছে।

ইলেক্ট্রনিক্স খাতে ব্যবসা বাড়াতে বিশ্ববিখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড ‘শার্প’ও তাদের রেফ্রিজারেটরের উপর হালাল লেবেল লাগিয়ে ব্যবসায় এগুচ্ছে।

Advertisement

ইন্দোনেশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ হিসেবে দেশটির অধিকাংশ কর্মক্ষম মুসলিমই নিয়মিত বৈধ উপার্জন ও ইসলামি ভাবধারায় জীবনযাপন করে আসছে। তারা আয়-ব্যয়ের চিন্তা করেন না বরং তারা কেবল আত্মিক প্রশান্তি লাভ করতে চান। হালাল জীবন-যাপন করতে চান।

ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতেও ধর্মীয় অনুশাসনের প্রভাব পড়ছে। গত এপ্রিলের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জোকো উইদোদো দেশটির প্রবীণ ও বিখ্যাত ইসলামিক স্কলারদের তার সফরসঙ্গী হিসেবে বেচে নেন। যাদের মধ্যে অন্যতম সেরা ইসলামিক স্কলার মারুফ আমিন।

ইন্দোনেশিয়ার ওলামা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আমিন ইসলামি শরিয়ায় অভিজ্ঞ আলেমদের সঙ্গে নিয়ে দেশটিতে পরিপূর্ণ ইসলামি ব্যাংকিং ও হালাল সনদ প্রবর্তনে প্রচারণা ও কাজ করে যাচ্ছেন।

ধর্মীয় অনুশাসন ও ইসলামি অর্থনীতিই দেশটিকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার একটি সংক্ষিপ্ত তথ্য উঠে এসেছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে। আর তাহলো-> ‘ইন্দোনেশিয়ার মানুষ ২০১৯ সালে হালাল খাবার, পর্যটন, ফ্যাশন এবং প্রসাধনীর পেছনে ২১৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে। যা ২০১৪ সালে ছিল ১৯৩ বিলিয়ন ডলার৷

> ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সম্পদ ছিল ৪৮৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়র রুপী, যা গত নয় বছরের থেকে ৩০০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধির সূচককেই নির্দেশ করে৷

ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ব্যাংক ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি গভর্নর দোদি বুদি ওয়ালুয়ো। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘দেশটিতে হালাল খাবার, ফ্যাশন এবং ইসলামি পর্যটনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ শরিয়া অর্থনীতি অগ্রসরমান হচ্ছে এবং বাড়ছে হালাল পণ্য ও হালাল সনদের চাহিদা।’

এদিকে ইন্দোনেশিয়ার কিছু আবাসন কোম্পানিও সুন্নাতের অনুরণে আবাসন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তারা তাদের আবাসনের কেন্দ্রস্থলে লিবিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফির অর্থায়নে নির্মিত মসজিদকে ঘিরে আবাসন তৈরি করবে বলে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে কাজ করছে।

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জার্কাতায় হালাল পণ্য নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে দেশি বিদেশি বহু কোম্পানিই এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। এ প্রদর্শনীতে কোরিয়ার এসওএস বিউটি নামে প্রতিষ্ঠান হালাল লেবেলে তাদের এক নতুন প্রোডাক্ট ক্রিম নিয়ে আসে। কোম্পানির প্রতিনিধি জানান, ‘এ ক্রিম ব্যবহারে চামড়ার ছিদ্রগুলোকে বন্ধ হবে না এবং এ ক্রিম ব্যবহারে ওজু করলে চামড়ার ছিদ্রেও পানি পৌছবে।

উল্লেখ্য যে, ২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের পণ্য হালাল কি না, তা লেবেল করতে নির্দেশনা জারি করেছিল৷ সে সময় তাদের এ নির্দেশনায় অগ্রগিত না হলেও দেশটিতে এখন হালাল পণ্যের বিপণন মূল ধারায় আসতে শুরু করছে। আর তাতেই বেড়ে চলছে অর্থনীতির চাকা।

এমএমএস/জেআইএম