রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশাপাশি মৌসুমী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষকেও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) সহযোগী জাতিসংঘের সংস্থাগুলো। বুধবার এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসসিজি জানায়, আইওএম, ইউএনএইচসিআর ও ডব্লিওএফপিসহ এনজিও সংস্থাগুলো গত শনিবার থেকে কক্সবাজারে শুরু হওয়া ভারীবর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা দিচ্ছে।
Advertisement
এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও গত ৪৮ ঘণ্টায় ক্যাম্পগুলোতে ১৫টি ভূমিধস, ২৫টি ঝড়/ঝড়োবৃষ্টি এবং ৫টি বন্যার খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে ১৪ হাজার ৮০১ জন মানুষ সাময়িকভাবে আশ্রয় থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এছাড়াও ৪২৭টি আশ্রয় আংশিকভাবে এবং ৬৬টি আশ্রয় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই বন্যায় চার হাজার ৮৪২টি আশ্রয়স্থলের প্রায় ১৬ হাজার ১৯০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
টেকনাফে একটি ভূমিধসের ঘটনায় দুইজন বাংলাদেশি শিশু নিহত এবং ১০ জন মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের অন্যান্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে কক্সবাজারের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি, যার ফলে এখানে প্রায়ই ভূমিধস, বন্যা, ঝড়ো হাওয়া এবং জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে।
আইওএমের বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, বৃষ্টি এবং ঝড়োবাতাস জীবনকে বিপন্ন করছে এবং মানুষের দুর্দশা বাড়াচ্ছে। আমাদের দলগুলো জরুরি পরিষেবা, মেরামত ও স্থানান্তরের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করে চলেছে। বৃষ্টি-পরবর্তী তাৎক্ষণিক ক্ষতিকে সামাল দেয়ার পাশাপাশি আমরা দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ঝুঁকি নিরসনেও কাজ করে যাচ্ছি।
Advertisement
বৃষ্টিপাতের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা টেকনাফের ক্যাম্প-২৬ এ গত মঙ্গলবার প্রায় চার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদের একটি অংশকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ১৫টি নির্ধারিত সেফ হ্যাভেন বা নিরাপদ আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হয় এবং অন্যান্যদের তাদের আশেপাশের পরিবারগুলোতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
ইউএনএইচসিআরের সুরক্ষা বিভাগের কর্মীরা এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলো সব শরণার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং পৃথক হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের একত্র করতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়স্থল, খাদ্য এবং পরিষ্কার ও সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার কার্যালয়ের প্রধান মেরিন ডিন কাজদোম্যাকজ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা করার জন্য আমরা আমাদের সহযোগী সংস্থা এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। আমরা শরণার্থী ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষের প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। এই মানুষগুলোকে কেন্দ্র করেই আমাদের যাবতীয় সাড়াদান কর্মকাণ্ড। আমরা প্রায় তিন হাজার শরণার্থীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি যাতে তারা নিজেরাই জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে এবং দুর্যোগের ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
গত কয়েকদিনে মানবিক সংস্থাগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে শেল্টার কিট বা আশ্রয়ের সরঞ্জামাদি, হট মিল/গরম খাবার এবং হাই এনার্জি বিস্কুট সরবরাহ করেছে।
Advertisement
ডব্লিওএফপির কক্সবাজারের ইমার্জেন্সি কো-অর্ডিনেটর পিটার গেস্ট বলেন, ডব্লিওএফপি এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতির জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছে এবং আমরা সাড়ে ১২ হাজার মানুষকে ছয় হাজার গরম খাবার এবং সাড়ে ছয় হাজার বাক্স হাই এনার্জি বিস্কুটসহ বাড়তি খাবার সরবরাহ করেছি। এছাড়াও আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসে নিয়োজিত দলগুলো বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করছে এবং প্রয়োজনে খাদ্য ও অত্যাবশ্যক পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
আইএসসিজির সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নিকোল এপটিং বলেন, বর্ষা মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি এবং সাহায্য কার্যক্রম বজায় রাখতে, মজুত পূরণ করতে, যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাতে, বর্ষার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং মোবাইল রেসপন্স টিম বা তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে যাওয়া দলগুলোর দক্ষতা বাড়াতে এখনও দ্রুত তহবিলের প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় তহবিলের কেবলমাত্র ৩৮ শতাংশ পাওয়া গেছে যেখানে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনসংখ্যা উভয়ের জন্যই দরকারি পরিষেবা এবং স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো নিয়ে অনেক কার্যক্রম রয়েছে।
আইএসসিজির সহযোগী জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং এনজিওগুলো প্রতিনিয়ত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে এবং এসব ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদান করছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা থাকায় প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন অবস্থার উন্নতি না হলে পথঘাট, সেতু এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থার ক্ষতি ক্রমেই বাড়তে থাকবে।
জেপি/বিএ