নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক বাবলু মিয়ার (২৪) মরদেহ নয়দিনেও হস্তান্তর করা হয়নি।
Advertisement
পাশাপাশি আহত অবস্থায় আটক করে নিয়ে যাওয়া কিশোর একই উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর গ্রামের গোলজার রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলামকে (১৫) ফেরত দেয়নি বিএসএফ। এ অবস্থায় বাবলু মিয়ার মরদেহ ও সাইফুল ইসলামকে জীবিত ফেরত দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ওই এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ।
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। নিহত বাবলু উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ যৌথবাঁধ এলাকার বাসিন্দা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে মানববন্ধনে অংশ নেন নিহত বাবলু মিয়ার স্ত্রী রাজিফা বেগম, বাবা নূর মোহাম্মদ, মা আছিয়া খাতুন, বড় ভাই রাসেল মিয়া, ছোট ভাই লিটন ও খোকন, বোন পারভীন আক্তার, নার্গিস আক্তার, সিমু আক্তার ও আন্না বেগম।
Advertisement
এলাকাবাসী জানায়, গুলি করে বাবলুর লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ। সেই সঙ্গে সাইফুলকে নিয়ে যায়। ৫১-বিজিবির সহযোগিতায় নিহত বাবলু ও বিএসএফের হাতে আটক সাইফুলকে ফেরতের দাবি জানানো হলেও এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নয়দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের ফেরত দেয়নি বিএসএফ।
মানববন্ধনে বাবলুর বাবা-মা, ভাই-বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা কিছুই চাই না, বাবলুর লাশ ফেরত চাই। ঘটনার নয়দিন পেরিয়ে গেলেও বাবলুর লাশ ফেরত পাইনি। দেশের মাটিতে বাবলুর লাশ দাফন করতে চাই আমরা।
মানববন্ধনে কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন নিহত বাবলুর স্ত্রী রাজিফা আক্তার। একপর্যায়ে তিনি বলেন, আমার স্বামীর লাশ এনে দেন। শেষবারের জন্য তাকে একবার দেখতে চাই।
অপরদিকে, বিএসএফের হাতে আটক সাইফুলের বাবা গোলজার রহমান বলেন, আমার ছেলেকে ফেরত চাই। ৫১-বিজিবির কাছে বার বার গেছি, কিন্তু আমার ছেলেকে দেশে আনার কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা।
Advertisement
এর আগে রোববার বিকেলে নিহত বাবলুর লাশ ও আটক সাইফুলকে ফেরত আনার দাবিতে ডিমলার ইউএনওর মাধ্যমে ৫১-বিজিবির কমান্ডিং অফিসারের (সিও) কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছিল দুই পরিবারের সদস্যরা। এরপর বাবলুর লাশ ও সাইফুলকে ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
যদিও, বুধবার বিকেলে কালিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে সীমান্তে চোরাচালান, মানবপাচাররোধে গণসচেতনতার জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে মতবিনিময় সভার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এজন্য এলাকায় মাইকিং করেছিল বিজিবি। কিন্তু বাবলুর মরদেহ ও আটক সাইফুলকে ফেরতের দাবি নিয়ে এলাকাবাসীর মানববন্ধন কর্মসূচির কারণে সভা স্থগিত করে বিজিবি।
গত মঙ্গলবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে বাবলু মিয়া ও সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার ভোরে নীলফামারীর ডিমলা ও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমানার ভারত সীমান্তের ৭৭২ প্রধান পিলারের কাছে ঘাস কাটতে যায়।
তাদের সঙ্গে গরু দেখতে পেয়ে ওপারের উড়াল বিএসএফের ক্যাম্পের সদস্যরা গুলি ছোড়ে। এতে বাবলু মিয়া ঘটনাস্থলে নিহত ও সাইফুল ইসলাম আহত হয়। নিহত বাবলুর মরদেহ ও আহত সাইফুলকে ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ।
জানা যায়, বাবলুর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে কুচবিহার হাসপাতালের মর্গে রেখেছে বিএসএফ। পাশাপাশি চিকিৎসা শেষে সাইফুল ইসলামকে জলপাইগুড়ির কিশোর সুরক্ষাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
জাহেদুল ইসলাম/এএম/এমএস