দেশজুড়ে

সরকারি জায়গায় ভবন নির্মাণ করলেন আ.লীগ নেতা

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাটে সড়ক ও জনপথের (সওজ) জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রভাবশালীর ভবন উচ্ছেদ না করায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

Advertisement

ভবনটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের মনে এখন একটি প্রশ্নই ‘কি আছে ওই ভবনে?’ যে ভাঙা হচ্ছে না। ভবনটির মালিক হলেন- থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ। উপজেলার ফেরিঘাটে সওজের জায়গায় গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু ফেরিঘাটে নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হকের ভবনটি সওজের জায়গায় হলেও ভাঙা হয়নি।

এ নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ভবনটির মালিক ভবনটি সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করেন। ভবনের সামনের অংশে স্টাইলে আঁকা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙানো হয়। ভবনের একটি অংশে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস করা হয় এবং বাকিগুলো ভাড়া দেয়া হয়। ভবনের সামনে থেকে পাকা রাস্তা পর্যন্ত বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেড়া দেয়া হয়।

Advertisement

এ বছর আবারও নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজশাহী-নওহাটা-চৌমাশিয়া সড়কের ৩২ কিলোমিটার থেকে ৬৬ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে উচ্ছেদের নোটিশ দেয় সওজ।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ফেরিঘাটে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সওজ। এ সময় সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অনেক অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয়দের মনে সন্দেহ ছিল এবারও ওই ভবনটি ভাঙা হবে না। বাস্তবে তাদের ধারণা সঠিক হয়েছে। ভবনটি না ভেঙে অভিযান শেষ করে সওজ। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

কয়াপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ফেরিঘাটে গরিব মানুষরা রাস্তার পাশে দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের সব দোকানপাট ভেঙে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ নেতা মোল্লা এমদাদুল হকের ভবনটি ভাঙা হয়নি। গত দুই বছরে অনেক ভবন উচ্ছেদ করা হলেও ওই ভবন ঠিকই সরকারি জায়গায় রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে মান্দা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক বলেন, সরকারি জায়গাটি আমি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা (লিজ) নিয়েছি। দু’বছর আগে ভবনের কিছু অংশ ভাঙা হয়েছিল। এবার আবার কিছু অংশ ভাঙা হলো। আমরা নিজেরাই ভবনটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সওজের কাছে আবেদন করেছিলাম। সওজ থেকে একটি স্ট্যাম্প নিয়ে আসতে বলা হয়। স্ট্যাম্প নিয়ে আসার আগেই ভবনটির সামনের অংশ ভেঙে দেয়া হয়।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, ওই জায়গায় আগে আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস ছিল। পরবর্তীতে সেখানে দোতলা ভবন করার পর নিচের অংশের পেছনের দিকে পার্টি অফিস করা হয়। আর সামনে দিকে দোকান ঘরের জন্য ভাড়া দেয়া। এছাড়া ভবনের ওপরের অংশ ভাড়া দেয়া হয়েছিল।

নওগাঁ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদুল হক বলেন, রোব ও সোমবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যে পরিমাণ ভাঙার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি। আগামী ১০-১২ দিন পর আবারও সওজ ঢাকা জোনের উপ-সচিব মাহবুবুর রহমান ফারুকী উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নেবেন। আওয়ামী লীগ নেতার ওই ভবনটি পুরোটাই সওজের জমিতে। তবে ভাঙা সম্ভব হয়নি। ভবনের মালিক নিজ থেকে ভেঙে নিতে চেয়েছেন। যদি তারা ভবনটি ভেঙে না নেয়, আমরা আবারও ভবনটি ভাঙা শুরু করব।

আব্বাস আলী/এএম/পিআর