পবিত্র কোরবানির ঈদ সমানে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর কামারপট্টির কারিগররা। ঈদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে পশু কোরবানির সরঞ্জাম দা, চাপাতি, ছুরি, বটিসহ মাংস কাটার নানা অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা। বছরে এ সময়ই এই উপকরণগুলোর চাহিদা বেশি থাকায় দিনের পাশাপাশি রাতেও এসব লোহার সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কর্মকারদের। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, গাবতলী, খিলগাঁও, মহাখালী, কল্যাণপুর, মিরপুর-সহ বিভিন্ন কামারপট্টি ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।কারওয়ান বাজার কামারপট্টি বহুমুখী সমবায় সমিতির অর্থ সম্পাদক মো. সুমন জাগো নিউজকে বলেন, সারাবছর কাজের খরা থাকলেও কোরবানির ঈদের সময় কাজের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ঈদ শুরু দুই সপ্তাহ আগ থেকে কাজের অর্ডার আসে প্রচুর। এ সময় কারিগররা দম ফেলার সময় পায় না। সবাই দিন রাত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে প্রত্যেক কামারশালে ২ থেকে ৫ লাখ টাকার মতো অর্ডার আসে।এবারে ব্যবসা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে আমাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে। হয়তোবা এক সময় এই পেশা আর থাকবে না।রাজধানীর কাওরান বাজারে ‘মা জননী কর্মশালা ‘মালিক মো. বজলু হোসেন বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে চাইনিজ কুড়াল, সাইট ছুরি, জবাই ছুরি এবং চাপাতি-সহ বিভিন্ন অর্ডার পেয়েছি। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এক টন মালের অর্ডার এসেছে। আশা করছি এবার ভালো ব্যবসা হবে।কাওরান বাজারের আরেক ব্যবসায়ি বিদ্যুৎ কুমার বলেন, এবার লোহার দাম কম থাকলেও কয়লার দাম বাড়ায় অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। গত বছর প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে এ বছর প্রতি বস্তা কয়লার দাম পড়ছে ২০০০-২৩০০ পর্যন্ত। তাই লোহার এসব সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।দোকান ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পিস ছোট ছুরি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, চাপাতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, মাঝারি আকারের ছুরি ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং বটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।৩৪ বছর ধরে কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত মিরপুরের কচুঁক্ষেত এলাকার সমেন কর্মকার। ঈদে ব্যস্ততা সম্পর্কে তিনি জানান, অন্য সময় ব্যবসা ভালো না হলেও কোরবানির ঈদের আগে ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেক। এখনও ঈদের বেচা-কেনা শুরু হয়নি।তবে অর্ডার এসেছে অনেক। আমাদের বেচা-কেনা হয় মূলত কোরবানির দুদিন আগে। আশা করছি, এবার ভালো বেচা-কেনা হবে।কারওয়ান বাজার কামার পট্টি বহুমুখী সমবায় সমিতির তথ্য মতে, সেখানে তাদের ৬০টি দোকান আছে। এর মধ্যে ৪০টি নিজেদের তৈরি সরঞ্জাম বিক্রি করে। আর ২০টি এসব সরঞ্জাম পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করে। কারওয়ান বাজারের এ শিল্পের সঙ্গে প্রায় ৩৫০ পরিবার জড়িত।আএসএস/আরএস
Advertisement