ধর্ম

মৃত্যুর আগে লেখা ফিলিস্তিনি কারাবন্দির আবেগঘন চিঠি

দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় দখলদার ইসরাইলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনের মানুষের নিরন্তর সংগ্রাম চলে আসছে। নাড়ির টানে নারী-পুরুষ, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন একসঙ্গে লড়াই করে আসছেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও হয়তো চলবে এ সংগ্রামে। আবার জোড়ায় জোড়ায় বন্দি হয়েছে অনেকেই।

Advertisement

তাদের একজন বাসসাম আল-সায়েশ। ইসরাইল দখলদার বাহিনীর হাতে বন্দি স্ত্রীকে দেখতে এসে কারারুদ্ধ হন তিনি। আর কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন ৪৭ বছর বয়সী এ ফিলিস্তিনি। ইসরাইলের কারাগার থেকে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ এ মুসলিম বন্দির মৃত্যুর আগে লেখা আবেগঘন চিঠি। যা সবাইকেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে। আর তাহলো-

‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহহয়তো তোমাদের বলা এই আমার শেষ কথা, আমি জীবনের শেষ দিনগুলোর একেবারেই শেষ মুহূর্তে, শ্বাস-প্রশ্বাসের অন্তিমকালে। আমার প্রথম কথা- ‘আমি তোমাদের সবাইকেভালবাসি’।

আমার মাতৃভূমি, আমার দেশের প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক। নাবলুসের উপর নাজিল হোক আল্লাহর রহমত। আমার সেসব স্মৃতিসমূহ অমলিন থাকুক যেগুলো মাতৃভূমির সঙ্গে আমার ভালোবাসাকে দৃঢ় করেছে। আমার পরিবার-প্রতিবেশীকে সালাম। আমার মসজিদ-মিহরাব, জামিয়া ও বন্ধুদের উপর প্রশান্তির বৃষ্টি ঝরুক।

Advertisement

যারা সামথ্য থাকা সত্ত্বেও আমাকে দুর্দিনে সাহায্য করেনি তাদের কথা বাদই দিলাম, তবে তোমাদের কাছে আমার শেষ ওসিয়ত ও উপদেশ-‘ইসরাইলের কারাগারে আমার অসুস্থ বন্দি ভাইদের জুলুম-অত্যাচার ও সীমাহীন ব্যথা-বেদনার অন্ধকার ওই কারাপ্রকোষ্ঠে ফেলে রাখতে দিওনা। তোমাদের কাছে আমার আকুল আবেদন- ইসরাইলের কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্ত করে আমার প্রতি রহম করো তোমরা।’

উল্লেখ্য যে, ইসরাইলের এক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে বাসসাম আল-সায়েশ-এর স্ত্রীকে আটক করে ইসরাইল। আর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেই গ্রেফতার হন বাসসাম আল-সায়েশ।

দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ৪৭ বছর বয়সী বাসসাম আল-সায়েশ অত্যাচার নির্যাতনে বিনা চিকিৎসা ও অবহেলা ইনতেকাল করেন। রক্তসল্পতা, বোন ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা জর্জরিত এ ফিলিস্তিনি কারাগারে পায়নি কোনো চিকিৎসা।

চিঠির ভাষাই বলে দেয়, ইসরাইলের অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে অত্যাচার-নির্যাতনে মৃত্যুর অপেক্ষায় আছে সংখ্যা না জানা ফিলিস্তিনি বন্দি। যারা বাসসাম আল-সায়েশের মতোই অপেক্ষা করছে করুণ মৃত্যুর।

Advertisement

স্বাস্থ্যের চরম অবনতিতে শুধু মৃত্যুই ছিল বাসসাম আল-সায়েশের একমাত্র করুণ পরিণতি। তার মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে, নিজের জন্য সাহায্য না চেয়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের সাহায্যার্থে তিনি তার জাতির উদ্দেশ্যে লেখেনে ছোট্ট আবেগঘন এ চিঠি।

বাসসাম আল-সায়েশের এ চিঠি প্রতিটি মুসলিম উম্মাহর বিবেক ও হৃদয়ে নাড়া দেয়। ফিলিস্তিনভিত্তিক গণমাধ্যম দুনিয়া আল-ওতান তার পরিবারের রাতে গত মঙ্গলবার এ চিঠি প্রকাশ করেন। এ আবেগঘন চিঠিই হোক মজলুম ফিলিস্তিনিদের মুক্তির হাতিয়ার।

এমএমএস/জেআইএম