কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পরও ঠেকানো যাচ্ছে না এডিস মশা।
Advertisement
প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আড়িয়া ও খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নে এখন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা শতাধিক।
এডিস মশা নিধন ও আক্রান্তদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব ও স্বাস্থ্যকর্মী ওয়ালিউর রহমান।
তারা বর্তমানে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে জোসনা খাতুন (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
Advertisement
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৌলতপুর উপজেলায় সর্বপ্রথম আড়িয়া ইউনিয়নের ছাতারপাড়া গ্রামের ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়। বর্তমানে এই গ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে দাঁড়িয়েছে। রোগের কারণ অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ছাতারপাড়া গ্রাম কাজ করে গেছেন।
সব মিলিয়ে আড়িয়া ইউনিয়নে ৮০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। পাশের খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে আরও ২৫ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। উপজেলার রিফায়েতপুর, শিতলাইপাড়া ও মহিষকুন্ডি গ্রামে অন্তত ১০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যারা কাজ করছেন তারাও রয়েছেন শংকায়। ডেঙ্গু রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও রোগী শনাক্তকরণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন ছাতারপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইসিপি ওয়ালিউর রহমান। তিনি গত বুধবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এছাড়া শনিবার স্থানীয় আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করছিলেন তিনি। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বয়ে টিম কাজ করছে।
Advertisement
আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ আনছারী বিপ্লব বলেন, আমার ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি এডিস মশার আক্রমণের শিকার হয়েছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ডেঙ্গু রোধে দিনরাত সেখানে কাজ করেছি আমি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করতে গিয়ে নিজেও এখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে আড়িয়া ও খলিষাকুন্ডি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে প্রতিদিনই পরিস্কার পরিচ্ছনতা অভিযান, এডিস মশা ও তার লার্ভা নিধনে ঔষধ স্প্রে এবং জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও এডিস মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও এডিস মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না সে বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গ্রামবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আল-মামুন সাগর/এএম/পিআর