১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়াদের জন্য কক্সবাজারে নির্মাণাধীন দেশের সবচেয় বড় খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫তলা বিশিষ্ট ১৩৯টি ভবনের মধ্যে ১০টির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আরও ১০টি ভবনের কাজ চলমান, যা শিগগিরই শেষ হবে।
Advertisement
সম্প্রতি সংসদ ভবনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানান জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মাহফুজ আলম। বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যম এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
বৈঠকে মো.মাহফুজ আলম বলেন, অনুমোদিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৪৪৮টি পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নামে গ্রহণপূর্বক করে এককভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সূত্র জানায়, এরপর কমিটির সদস্য মো. মোতাহার হোসেন বলেন, এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য দেশের অনেক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেনাবাহিনী সব কাজ যেভাবে সুনামের সঙ্গে করছে, এখানেও যেন তা থাকে।
ব্যয়বহুল এই নির্মাণ কাজের জন্য কাজের মান ঠিক রেখে পানি, বিদ্যুৎ, রাস্তাসহ প্রকল্পের সব কাজ সেনাবাহিনীকে সম্পন্ন করার অনুরোধ রাখেন তিনি। তবে তিনি বিশাল এই প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, সেনাবাহিনী কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে বিশাল এই প্রকল্প সুনামের সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। তবে এই কাজের কিছু অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে। পানির ব্যবস্থা, রাস্তা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি সমাধান নিশ্চিত করতে না পেরে ভবন তৈরি করা হচ্ছে, যা আদৌ সেখানে বসবাস উপযোগী করা যাবে কি না সন্দেহ। স্কুল, বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তা নির্মাণ- এগুলো আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে। এতে করে বুঝা যায়, এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না। উপস্থাপনায় যেটা বুঝা গেল, ১০ কি.মি. দূর থেকে পানি আনার ব্যবস্থা হচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে। এরকম বিভিন্ন কাজ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে দিয়ে না করিয়ে সব কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করানোর জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
Advertisement
তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভবন ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি হয়ে গেছে, কিন্তু অন্যান্য সুবিধা কবে হবে, জানা নেই। একসময় দেখা যাবে নির্মিত ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের ব্যবস্থাকরণসহ প্রকল্পের সব কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে করানোর অনুরোধ জানান।
এরপর কমিটির সভাপতি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এতবড় একটি বিশাল প্রকল্প সেনাবাহিনীকে সুনামের সঙ্গে সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান। তিনি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে একমত পোষণ করে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার জন্য প্রকল্প পরিচালককে অনুরোধ করেন।
তিনি বলেন, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের সব কাজ সেনাবাহিনীকে দিয়ে করাতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, সেনাবাহিনী ভালো কাজ করে। তাই এই বিশাল প্রকল্পটিও সেনাবাহিনী অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
জানা যায়, ১৯৯১ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে উদ্বাস্তু হয় কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে অনেকেই ঘরবাড়ি হারিয়ে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার বিমানবন্দর সংলগ্ন নাজিরারটেক, কুতুবদিয়া পাড়া ও সমিতি পাড়ায়। কিন্তু বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আশপাশের সরকারি খাস জমিতে বসবাসরত উদ্বাস্তু বাসিন্দাদের স্থানাস্তরের উদ্যোগ নেয় প্রশাসন।
Advertisement
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বাঁকখালী নদীর পাশে প্রায় ২৫৪ একর জমিতে নেয়া হয় জেলার খুরুশকুল উপজেলায় বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্যোগ।
এইচএস/জেডএ/এমকেএইচ