রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন প্রায় আড়াই বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এখনো সেখানেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরে (এলজিইডি) একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হলেও এ পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তর রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৫৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন দুই শিফটে তাদের পাঠদান করা হয়। প্রথম শিফট চলে সকাল সোয়া ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং ২য় শিফট দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরমধ্যে শুধু শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আলাদা কক্ষে ক্লাস নেয়া হয়।
এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ১৯৯৩ সালের ১৩ অক্টোবর ভবনটি নির্মিত হয়। এরপর ২০১৭ সালের শুরুর দিকে বিদ্যালয়টির মূল ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে সেখানে ক্লাস নিতে নিষেধ করে তারা (এলজিইডি)। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ ওই ভবনে এখনও পাঠদান অব্যাহত রয়েছে।
Advertisement
সম্প্রতি ক্লাস চলাকালীন সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনের মতো ক্লাসে উপস্থিত রয়েছে। শিক্ষকরাও তাদের পাঠদানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা খসে পড়েছে। একাধিক ফাটলের চিহ্ন স্পষ্ট। কয়েক দিন আগের বৃষ্টির পানি ছাদ চুইয়ে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পড়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম।
৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী আখিঁ মনি জানায়, তার বাড়ি তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের নদীরপাড় এলাকায়। সে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসে। ভবনটি লেখাপড়া করার জন্য নিরাপদ নয়, যে কোনো মুহূর্তে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জানালে সে দীর্ঘক্ষণ চুপ থেকে বলে, এ ধরনের কথা আগে শুনিনি।
৩য় শ্রেণির নাদিরা জানায়, সকালে ক্লাস হয়। বাধ্য হয়ে সে নিজেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৌসুমি আক্তার জানান, ২০১৭ সালের শেষ দিকে তিনি এই বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন। এর আগে মূল বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে এলজিইডি। কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে ওই ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
Advertisement
তিনি আরও জানান, নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য একাধিকবার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং এলজিইডিকে জানানো হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরেও বিষয়টি অবগত করেছেন। এরমধ্যে দুবার সংস্কারের জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু ভবনটি সংস্কারের মতো অবস্থায় না থাকায় সেই টাকা ফেরত গেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ভনবটি সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায় ৬ মাস আগে তার কাছে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছিল, তখন তিনি এই বিদ্যালয়টির নাম উল্লেখ করেছেন।
এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী জামাল আহমেদ হায়দার বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সেখানে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে নিষেধ করা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা এলজিইডি অফিসে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।
জিতু কবীর/এমএমজেড/এমকেএইচ