শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জোরপূর্বক ১১ ছাত্রীর চুল কেটে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিক ও দফতরির বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে অবস্থিত ২৯ নং ডিএমখালী বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।
Advertisement
এদিকে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবসী অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে সোমবার অভিযোগের তদন্তে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মশিউল আজম হিরক। এছাড়া দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
সরেজমিনে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ওই স্কুলের ৫ম শ্রেণির ১১ ছাত্রীর চুল এবড়ো-থেবড়োভাবে কেটে দেয় বিদ্যালয়ের দফতরি কাম নৈশপ্রহরী জুমান। প্রধান শিক্ষক কারেরী গোপ নিজে দাঁড়িয়ে থেকে জুমানকে মেয়েদের চুল কাটতে নির্দেশ দেন। এ সময় ছাত্রীরা অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও জোরপূর্বক ছাত্রীদের চুল কেটে দেয় জুমান। এতে ছাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করে। আশপাশ থেকে অভিভাবকরা এগিয়ে এলেও প্রধান শিক্ষক তাদের কাউকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেননি।
Advertisement
এদিকে পুরুষ দফতরিকে দিয়ে চুল কেটে দেয়ার খবর জানাজানি হওয়ায় এলাকায় লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না ওই ছাত্রীরা। কেউ কেউ বিদ্যালয়ে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
এ ঘটনায় অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ও দফতরির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রী জানায়, আমার চুল অনেক বড় ছিল। আমি কাটতে বারবার নিষেধ করেছি। কিন্তু ম্যাডাম দফতরিকে দিয়ে জোর করে আমার চুল কেটে দিয়েছে। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছি। যেভাবে এবড়ো-থেবড়ো করে চুল কেটেছে এখন সব চুল ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। লজ্জায় স্কুলে যায়নি। আমি এর বিচার চাই।
এক ছাত্রীর বাবা বলেন, আমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে। কিছু দিন বাদে হাই স্কুলে যাবে। একজন পুরুষকে দিয়ে আমার মেয়ের চুল কাটার সাহস প্রধান শিক্ষক পেল কোথায়? চুল হলো মেয়েদের অলংকার। এখন মেয়ে আমার স্কুলে যায় না। ঘর থেকে লজ্জায় বের হয় না। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।
Advertisement
ওই বিদ্যালয়ের দফতরি কাম নৈশপ্রহরী জুমান বলেন, আমাকে প্রধান শিক্ষিক চুল কাটতে বলেছেন। আমি বিদ্যালয়ে থাকা কাঁচি দিয়ে চুল কেটেছি। আমার কোনো দোষ নাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক কাবেরী গোপ বলেন, আমি মাস খানেক আগে মা সমাবেশে মেয়েদের চুল সেটিংস করে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু ওরা আমার কথা বুঝে নাই। তাই শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর রাখতে আমরা শিক্ষকরা উপস্থিত থেকে দফতরিকে দিয়ে মেয়েদের চুল কেটে দিয়েছি। এ নিয়ে কিছু লোক প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।
শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। দুঃখজনক ব্যাপার। প্রধান শিক্ষক জোরপূর্বক ছাত্রীদের চুল কাটতে পারেন না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মো. ছগির হোসেন/এমবিআর/এমএস