জাতীয়

বিটিআরসির নির্দেশনা অকার্যকর, মুঠোফোনে সক্রিয় রোহিঙ্গারা

ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত বিটিআরসির নির্দেশনা কার্যকর হয়নি বলে দাবি করেছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি দাবি করেছে, রোহিঙ্গারা অবাধে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ক্যাম্পে তিনদিন অবস্থান করে তারা এ দৃশ্য দেখতে পেরেছেন।

Advertisement

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তোপখানা রোডের নির্মল সেন মিলনায়তনে ‘রোহিঙ্গাদের টেলিযোগাযোগ/ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত সর্বশেষ পর্যবেক্ষণ উত্তর সংবাদ সম্মেলন’এর আয়োজন করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনের পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান সংগঠনটির প্রচার সম্পাদক ওমর ফারুক খান ফাহিম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের টেলিযোগাযোগ/ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত বিটিআরসির নির্দেশনা কার্যকর হয়নি বলেই আমরা প্রত্যক্ষ করছি। গত ৩১ আগস্ট গণমাধ্যমে ‘অবৈধভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহার করে সংগঠিত হচ্ছে রোহিঙ্গা’ শিরোনামে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। যা বিভিন্ন গণমাধ্যম বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি সরকার আমলে নিয়ে বিটিআরসিকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ প্রদান করে। বিটিআরসি অপারেটরদেরকে একটি নির্দেশনা প্রদান করে। যাতে বলা হয়, আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোনো প্রকার সিম বিক্রি, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সিম ব্যবহার বন্ধ তথা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মোবাইল সুবিধাদি প্রদান না করা সংক্রান্ত সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করে বিটিআরসিকে অবগত করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরের দিন আরেকটি নির্দেশনা দেয় বিটিআরসি। এতে বলা হয়, সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরের দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ থাকবে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে ১২টি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন মো. নিজামের নেতৃত্বে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল। গত ৩ দিন তারা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে লক্ষ্য করেছেন, রোহিঙ্গারা অবাধে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। যদিও নির্দেশনার প্রথম দিন ইন্টারনেটের গতি অনেক জায়গায় কম ছিল। ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বিটিআরসির কোনো কর্মকর্তাকে আমাদের প্রতিনিধিরা দেখতে পায়নি।

Advertisement

সংগঠনটি আরও বলছে, রিটেইলারদের ব্যবসায় কোনো মন্দা আসেনি। এবং বিটিআরসির নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এমতাবস্থায় নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

রোহিঙ্গাদের অবৈধ টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধে কিছু পরামর্শ দিয়েছে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। এগুলো হলো-

১. রোহিঙ্গদের হাতে বাংলাদেশি যে সকল নাগরিক তাদের নিবন্ধিত সিম বিক্রয় করেছেন, পাশাপাশি যে সকল অপারেটর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সিম বিক্রয় করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে;

২. রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সকল প্রকার কর্পোরেট সিম বন্ধ করতে হবে;

Advertisement

৩. রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত ও বৈধ এনজিওগুলোর কর্মরত ব্যক্তিদের সিম সক্রিয় রেখে বাকি সকল সিমের সংযোগ নিষ্ক্রিয় করতে হবে;

৪. আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যবহৃত টেলিকম সেবা বুথ চালু রাখতে হবে;

৫. অবৈধভাবে টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও সীমান্ত ওপারে নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে হবে;

৬. সাত কার্যদিবসে বিটিআরসির নির্দেশনা কেন বাস্তবায়ন হলো না, তা জানতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশের করতে হবে;

৭. নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো গাফিলতি থাকলে তার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; এবং

৮. প্রয়োজনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নির্বাহী হাকিম দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যায় কি না, এ ব্যাপারে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, সবুজ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

এসআর/জেআইএম