অনেক স্বপ্ন সোহাগের। উনিশ পেরিয়ে কুড়িতে পড়েছে সবে। অথচ এ বয়সেই প্রবাসে কাটছে ছেলেটির সময়। পরিবারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে ২০১৮ সালের এপ্রিলে মালয়েশিয়ায় এসেছেন তিনি। রাজধানী শহর কুয়ালালামপুরের এস এল এস ট্রান্সপোর্ট (সিনলিং হং) কোম্পানিতে কাজ করছেন আত্মপ্রত্যয়ী সোহাগ।
Advertisement
মালয়েশিয়ার এ রকম ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলোতে শুধু সোহাগই নয়, তার মতো বহু বাংলাদেশি কাজ করছেন। আর এসব পরিশ্রমী কিশোর কর্মীরাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবার তথা দেশের অর্থনৈতির চাকাকে সচল রেখে চলেছেন। ওরাই বাংলাদেশের উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
সোহাগের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী উপজেলার রায়পুরা থানার বাঁশগাড়িতে । বাবা মো. ফিরোজ মিয়া, মাঠে কাজ করেই সংসার চালান। পাচঁ ভাইয়ের মধ্যে সোহাগ চতুর্থ। ক্লাস নাইন থেকে সবে ক্লাস টেনে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। কিশোর বয়সেই পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ার এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর হাত ধরে জিটুজি-প্লাসের আওতায় পাহাংয়ের পামওয়েল কোম্পানিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান সোহাগ।
মালয়েশিয়া আসার পরপরই নতুন ভিসার জন্য প্রথমেই মেডিকেল চেক-আপ করতে হয়। সোহাগ মেডিকেলে ‘আনফিট’ বলে সেখান থেকে চলে আসেন। চলে আসার কারণ হচ্ছে যদি কেউ মেডিকেলে আনফিট হন তখন ওই কোম্পানি ভিসা লাগাতে পারবে না। শুরুতেই হোঁচট খেল কিশোর সোহাগ। তবুও আত্মপ্রত্যয়ী সোহাগ ভেঙে পড়েনি।
Advertisement
এক পরিচিত জনের হাত ধরে অবৈধ হয়ে ও কুয়ালালামপুরের জালান ইপু এস এল এস ট্রান্সপোর্ট (সিনলিং হং) কোম্পানিতে ১৫শ রিঙ্গিতে কাজে যোগ দেন। সোহাগের মেধা ও মননশীলতায় গর্বিত মালিক। নিজের খরচের পর অতিরিক্ত টাকা বাবা-মাকে পাঠিয়ে দেন সোহাগ।
আজ সোমবার জালান ইপুতে এ প্রতিবেদকের কথা হয় সোহাগের সঙ্গে। অবৈধভাবে কাজ করছেন, ভয় হয় না?-এমন প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বললেন, ‘ভয় তো হয়ই। আমি আমার আত্মবিশ্বাস নিয়েই কাজে মনোনিবেশ করেছি। পরিবার এত টাকা ধার-দেনা করে মালয়েশিযায় পাঠিয়েছে। সে টাকা শোধ করতে হবে।’ দেড় বছরে কত টাকা পাঠিয়েছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে সোহাগ বলেন, ‘নিজের খরছের টাকা রেখে বেতনের পুরোটাই বাবার কাছে পাঠিয়ে দিই।’
পুলিশ বা ইমিগ্রেশন কি কোনো সমস্যা করে? ‘না, কোনো সমস্যা হয় না’, উত্তর সোহাগের। কারণ হিসেবে বললেন, ‘বস আমাকে আমাকে খুব পছন্দ করে। বস আমার পেছনে ছায়ার মতো রয়েছেন। এ কোম্পানিতে যতদিন থাকব, আমার বিশ্বাস কোনো সমস্যা হবে না।’
লেখাপড়া করার খুব ইচ্ছা ছিল সোহাগের। তবে পরিবারের অভাব-অনটনের কারণ তাকে শৈশবেই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয়। তারপরও আফসোস নেই তার। তিনি বললেন, ‘পরিবারের মুখে আহার দিতে পারছি-এটাই আমার সফলতা।’
Advertisement
এসআর/এমকেএইচ