জাতীয়

নির্যাতিত বিদেশ ফেরত নারীদের জন্য শেল্টার হোম করবে সরকার

কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা নারীদের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। তাদেরকে সহায়তা দেয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে একটি আশ্রয়কেন্দ্র বা শেল্টার হোম করার কথা ভাবছে সরকার।

Advertisement

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক জহিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দেশে ফেরত আসা প্রবাসী নারী কর্মীদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক সহায়তা দেয়ার জন্য অবিলম্বে ঢাকার বিমানবন্দরের কাছে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনের কথা হচ্ছে। প্রবাসী নারী কর্মীদের জন্য কল্যাণমূলক সেবা বাড়াতে ভবিষ্যতে একটি স্থায়ী শেল্টার হোমের পরিকল্পনাও রয়েছে।

এদিকে প্রবাসী নারী কর্মীদের জন্য বিমানবন্দরের কাছাকাছি শেল্টার হোম স্থাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এটা সময়োপযোগী উদ্যোগ। সরকারের উচিত অবিলম্বে দেশে ফিরে আসা নারী কর্মীদের সহায়তায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা। অনেক প্রবাসী নারী শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসেন। এ কারণে বিমানবন্দরে তাদের জন্য তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রয়োজন।

Advertisement

সুমাইয়া ইসলাম বলেন, এছাড়া অনেক ফ্লাইট রাতে পৌঁছায়। তখন এ মেয়েরা কোথায় যাবে? কারণ অনেকের পরিবার জানেও না যে তিনি ফিরেছেন। আবার অনেকের পরিবার সংশ্লিষ্ট কর্মীকে ফেরত নিতে চায় না। এমন অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয় নেয়ার জন্য একটি আশ্রয় কেন্দ্রের খুবই প্রয়োজন।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ ফেয়ার বোর্ডের তথ্য মতে, বিদেশে নিয়োগকর্তাদের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতি মাসে গড়ে শতাধিক প্রবাসী নারীকর্মী দেশে ফিরছেন।

চলতি বছরের (২০১৯) জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশ মিশন ৯শ’রও বেশি নারীকর্মীকে দেশে ফেরার জন্য এক্সিট পাস ইস্যু করেছেন বলে জানান মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

তবে প্রকৃতপক্ষে ফিরে আসা নারী কর্মীদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করেন তিনি। ‘কারণ, স্বেচ্ছায় ফিরে আসা নারীদের হিসেব আমাদের কাছে নেই’ -বলেন এ কর্মকর্তা।

Advertisement

দেশে ফিরে আসা বেশির ভাগ প্রবাসী নারীকর্মীরা স্বল্প বেতন, নিয়োগকর্তাদের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বেতন না পাওয়া এমনকি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছেন।

২০১৭ সালে আল নাঈম ইন্টারন্যাল রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি পাড়ি দিয়েছিলেন এক নারীকর্মী। এ বছরের আগস্ট মাসের প্রথম দিকে দেশে ফিরে আসেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুতের এ নারী।

তিনি বলেন, ‘আমার নিয়োগকর্তার এমন কোনো নির্যাতন নেই যে, তিনি করেননি। সব ধরনের নির্যাতন সেখানে সহ্য করতে হয়েছে। তারা আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত, এমনকি খাবারও কম দিত। কোনো মাসে চুক্তি অনুযায়ী বেতন পাইনি। দিনের পর দিন অত্যাচারিত হয়েছি কিন্তু প্রতিকার পাওয়ার জন্য কোথাও কোনো সহায়তা পাইনি।’

অত্যাচার সইতে না পেরে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে এক সময় পালিয়ে যান তিনি। পালিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নেয়া এ নারীকে কয়েক মাস সেখানেই (আশ্রয় কেন্দ্রে) থাকতে হয়। পরে দূতাবাসের ইস্যু করা ট্রাভেল পাস নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সবচেয়ে বেশি নারীকর্মী ফিরে আসছে সৌদি আরব থেকে। ২০১৫ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটিতে বাংলাদেশের নারীকর্মীদের অন্যতম বড় শ্রমবাজারে পরিণত হয়।

গত ২৭ আগস্টও সৌদি আরব থেকে ১১০ জন নারীকর্মী দেশে ফিরেছেন। নিজেদের নিয়োগকারীদের হাতে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ৬৮ হাজার ২৮৬ জন নারীকর্মী উন্নত জীবনের আশায় সৌদি আরবে পাড়ি জমায়। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ৮৩ হাজার ৩৫৪ জনে উন্নীত হয়। তবে ২০১৮ সালে এ সংখ্যা কমতে শুরু করে। ওই বছরে ৭৩ হাজার ৭১৩ জন নারী সৌদিতে যান।

জেপি/আরএস/পিআর