গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রফতানি আয় করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুর দ্বিতীয় মাসেই ধাক্কা লেগেছে রফতানি আয়ে।
Advertisement
আগস্টে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি আয় প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ কম হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমকি ৯২ শতাংশ কম।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানির অর্ডার কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠমোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি বাণিজ্য কমেছে। রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।
Advertisement
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭৬৮ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু এ সময়ে এ খাতে আয় হয়েছে ৬৭৩ কোটি ২১ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। একই সঙ্গে গত অর্থবছরের একই সমেয়ের তুলনায় রফতানি এ বছর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় দশমিক ৯২ শতাংশ কম।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে চলতি বছরের আগস্টে রফতানি আয় হয়েছে ২৮৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। যা লক্ষ্য ছিল ৩৮৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আগস্টে রফতানি আয় কমেছে ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে রফতানি আয় হয়েছিল ৩২১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৫ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৯০ শতাংশ। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রফতানি খাতে।
আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ও কমেছে। অর্থবছরের আগস্ট শেষে পোশাক রফতানিতে আয় হয়েছে ৫৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ কম। এ সময় রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে দশমিক ৩৩ শতাংশ।
Advertisement
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক উদ্যোক্তা ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পোশাক রফতানিতে আয় কমার মূল কারণ আগের চেয়ে অর্ডার কমেছে, পাশাপাশি মূল্যও কম দিচ্ছি। এছাড়া ভারত, ভিয়েতনাম, পকিস্তান ও চয়নাসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমরা অনেক ক্ষেত্রে নানা সমস্যা ও সুযোগ সুবিধার অভাবে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি। এ সব কারণে রফতানি আয় কমছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে পণ্য রফতানি করতে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রতিযোগী দেশগুলো রফতানিতে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনা করে সরকারকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারত, পাকিস্তান, চায়নাসহ অনেক দেশ ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। কিন্তু আমাদের টাকার ক্ষেত্রে এটি করা হয়নি। এ বিষয়েও সরকারকে বিবেচনা করতে হবে বলে জানান তিনি।
ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বড় খাত গুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। প্রথম দুই মাসে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।
প্লাস্টিক পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৮ শতাংশ। দুই মাসে এ খাতে আয় হয়েছে ২ কোটি ডলার।
আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। দুই মাসে পাট ও পাটজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ১৩ কোটি ৫ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ কম। তবে বেড়েছে চামড়াজাত পণ্য রফতানি। গত দুই মাসে চামড়া পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ১৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে।
এসআই/এএইচ/পিআর