প্রেমিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় খুলনার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও কর কমিশনার প্রশান্ত কুমার রায়ের ছেলে শিঞ্জন রায়কে জামিন দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
গ্রেফতারের ২৩ দিনের মাথায় রোববার মহানগর ও দায়রা জজ মো. শহীদুল ইসলামে আদালতে হাজির হয়ে ‘জামিনে আপত্তি নাই’ প্রেমিকা এমন লিখিত অঙ্গীকারনামা দিলে শিঞ্জন রায়ের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
প্রেমিকা ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকার পরও ১৪ আগস্ট অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন খুলনার কর কমিশনার সুশান্ত কুমার রায়ের ছেলে শিঞ্জন রায়। ১৬ আগস্ট শিঞ্জন রায়ের বৌভাতের দিন ছিল। কিন্তু ১৫ আগস্ট প্রেমিকার দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর থেকে খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন শিঞ্জন। এ অবস্থায় হাজতে বসে নিজের বৌভাতের খাবার খান তিনি।
শিঞ্জন রায়ের আইনজীবী রজব আলী বলেন, রোববার ছিল এ মামলার জামিনের শুনানির দিন। শিঞ্জন রায়ের অনুপস্থিতিতে জামিনের শুনানি শুরু হয়। শুনানির সময় মামলার বাদী শিঞ্জন রায়ের প্রেমিকা নিজের মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন। তিনি লিখিত অঙ্গীকারনামায় আদালতকে বলেন, ‘আসামি শিঞ্জন রায়কে জামিন দিলে আমার কোনো আপত্তি নাই’।
Advertisement
মামলা নিয়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে বাদীর সমঝোতা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী রজব আলী বলেন, বাদীর সঙ্গে আসামিপক্ষের সমঝোতা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে বাদী মামলা করে ভুল করেছেন; হয়তো এজন্য জামিনে আপত্তি করেননি।
তিনি বলেন, এ মামলার শুনানির সময় আসামিপক্ষে খুলনা আইনজীবী সমিতির খ্যাতনামা আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে নানা যুক্তি প্রদর্শন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ১০ হাজার জামানত রেখে শিঞ্জন রায়কে জামিন দেন আদালতের বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, জামিনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মহানগর ও দায়র জজ আদালতের জামিন দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে। আমাকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান কিছু জানাননি। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।
এর আগে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলায় শিঞ্জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশের পরিদর্শক মো. তৌহিদুর রহমান। শুনানি শেষে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
Advertisement
এ মামলায় ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, নগরীর সোনাডাঙ্গার নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এলএলবিতে তিনি ও শিঞ্জন রায় পড়াশোনা করেন। এক বছর আগে শিঞ্জন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। এরপর বিয়ে করার কথা বলে ভাড়া বাসাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। বাসা ভাড়া নিয়ে ‘লিভ-টুগেদার’ করেছেন তারা। বর্তমানে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা তিনি।
শিঞ্জনকে অনত্র বিয়ে করানো হচ্ছে এমন খবর পেয়ে তিনি ১৫ আগস্ট মুজগুন্নী আবাসিকের ১৬ নম্বর রোডে গিয়ে শিঞ্জন রায়ের দেখা পান। এ সময় বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাকে সেখান থেকে ইজিবাইকে জোর করে তুলে দিতে গেলে স্থানীয়দের নজরে আসে। পরে থানা পুলিশে খবর দিলে তারা দুজনকেই সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় নিয়ে যায়। পরে শিঞ্জন রায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় শিঞ্জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
আলমগীর হান্নান/এএম/জেআইএম