দেশজুড়ে

প্রবাসী খলিলুরের ব্যতিক্রমী ‘পোকা’র খামার

সুদূর যুক্তরাজ্য থেকে ‘পোকা’ এনে সিলেটের বিশ্বনাথে খামার গড়ে তুলেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী যুবক। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের নিজ বাড়ির পাশে ‘হাজি বায়োসাইকেল কোম্পানি’ নামে প্যারেট পোকার (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এই খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি। এ ধরনের পোকার খামার সিলেট বিভাগে এই প্রথম বলে জানা গেছে।

Advertisement

রোববার সকালে সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভেতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভেতরে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।

যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান জানান, মাতৃভূমিতে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল দীর্ঘদিন থেকে। তাই জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খামার করি। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির খাদ্যের মূল্য বেশি হওয়ায় চিন্তা করি কীভাবে কম মূল্যে খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর সিদ্ধান্ত নেই একটি প্যারেট পোকার খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগির পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা সংগ্রহ করে দেশে নিয়ে আসি। এরপর গত ২৬ জুন থেকে বাড়ির পাশে খামার তৈরি করে থেকে পোকার চাষ শুরু করি।

তিনি আরও জানান, পাখি ও মুরগির পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০ শতাংশ প্রোটিন ও ২০ শতাংশ ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। মরা এই পোকাই কোয়েল ও মুরগির প্রিয় খাবার।

Advertisement

পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি পোকা ১২ হাজার টাকা এবং পাখি ও মুরগির খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরনের (ভিটল, কিক্রেটস ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা হচ্ছে।

খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি আরও বড় করার পরিকল্পনা আছে।

এদিকে পোকার এই ব্যতিক্রমী খামার দেখতে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সের লোকজন প্রতিদিন খলিলুর রহমানের খামারে ভিড় করছেন। মানুষের এই আগ্রহ ও কৌতুহল তাকে আরও বেশি খামারের প্রতি মনোযোগী করে তুলছে বলে জানান তিনি।

ছামির মাহমুদ/এমবিআর/জেআইএম

Advertisement