দেশজুড়ে

পাট নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

সোনালী আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট আমাদের প্রধান অর্থকারী ফসল। এক সময় দেশের প্রধান রফতানি পন্য ছিল পাট ও পাটজাত দ্রব্য। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পাটের প্রায় ৭ শতাংশের চাষ হয় রাজবাড়ী জেলায়। কিন্তু এ বছর জেলার চাষিরা পাট নিয়ে আছেন বিপাকে।

Advertisement

এ বছরের বর্ষা মৌসুম এখরও শেষ হয়নি। কিন্তু তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিল ও হাওড়ে স্বাভাবিকের তুলনায় পানি অনেক কম। ফলে ভাল পানিতে পাটগাছ পচাতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

এদিকে পাট চাষের জন্য জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে পাটগাছ কাটা, জাগ দেয়া (পচানো), পরিষ্কার ও শুকানো পর্যন্ত যে টাকা খরচ হয়েছে সে তুলনায় বাজারে দাম অনেক কম। ফলে চরম লোকসানে পড়ছেন রাজবাড়ীর পাটচাষিরা।

পদ্মা, গড়াই, হড়াই, চত্রা, চন্দনাসহ বেশ কয়েকটি নদীর কোলঘেঁষা রাজবাড়ী জেলা। এছাড়া জেলায় রয়েছে হাজার হাজার একর নিচু জমি। যে কারণে রাজবাড়ী জেলাপাট চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। এ বছর জেলা সদর ও বালিয়াকান্দি উপজেলায় বেশি পাট চাষ হয়েছে। ফলন ও উৎপাদন ভালো হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এমনকি উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে জানিয়েছেন অনেকে।

Advertisement

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চাষিরা পাট কেটে তা অল্প পানিতে জাগ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকে বাড়ির আশপাশের পুকুর বা ছোট ছোট খালে, কেউ কেউ আবার বাড়তি টাকা খরচ করে নদীতে নিয়ে জাগ দিয়েছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বাধ্য হয়ে একই পানিতে একাধিকবার পাট দিতে হচ্ছে। এসব কারণে পানির রঙ ভাল না হওয়ায় পাটের রঙও ভাল হয়নি। ফলে এ বছর পাটের ফলন ও উৎপাদন ভাল হলেও সঠিক দাম না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ীতে মোট ৪৭ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪শ হেক্টর কম। আশা করা হচ্ছে এসব জমিতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপাদিত হবে।

চাষিরা জানান, পাট চাষ করে তারা এ বছর লোকসানে পড়েছেন। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ থেকে শুরু করে ধুয়ে শুকিয়ে বাজারে নেয়া পর্যন্ত সব মিলিয়ে তাদের প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমি থেকে তারা গড়ে ৫ থেকে ৭ মণ পাট পেয়েছেন। মান ভেদে বর্তমানে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১২শ থেকে দুই হাজার টাকা। ফলে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তারা বলেন, সরকার সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে, শুধু বাড়ায়নি পাটের দাম। এ অবস্থায় পাটের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৭ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যার সবই তোষা পাট। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের মান ও ফলন দুটিই ভাল হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে কৃষকদের পাট পচাতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য অনেকে বাড়তি টাকা খরচ করে দূরে নিয়ে জাগ (পচানো) দিচ্ছেন। এছাড়া একই পানিতে বার বার জাগ দেয়ায় পাটের মান খারাপ হচ্ছে। ফলে বাজার দামও কম পাচ্ছেন চাষিরা।

তিনি আরও বলেন, এ বছর কৃষকরা নতুন একটি জাতের পাট চাষ করেছেন। এটির চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। আশা করছি এ বছর রাজবাড়ীতে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে।

রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/এমএস