চন্দ্রযান-২ এর হাত ধরে গত এক মাস গোটা বিশ্বে আলোচিত ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। অথচ যিনি এই মিশনের মূল কারিগর এবং ইসরোর চেয়ারম্যান ড. কে শিবনের জীবন কিন্তু মোটেই সচ্ছল ছিল না। অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যেই তার বেড়ে ওঠা।
Advertisement
১৯৫৭ সালের ১৪ এপ্রিল তামিলনাড়ুর মেলা সারাক্কালভিলাই গ্রামে দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন কে শিবন। বাবা ছিলেন কৃষক। তার পরিবার এতটাই দরিদ্র ছিল যে, জুতা কেনার টাকাও ছিল না। খালি পায়েই স্কুলে যেতেন। কলেজে ওঠার পর প্রথমবার জুতা পায়ে দেন শিবন।
সংসারের খরচ কমাতে ছাত্রজীবনের বেশিরভাগ সময় ধুতি পরে কাটিয়েছেন। কিন্তু এই দারিদ্র্য লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি তাকে। জীবনের না পাওয়া নিয়ে শোক না করে যা পেয়েছেন সেগুলো নিয়েই এগিয়ে গেছেন ফলে মিলেছে সাফল্য।
কৃষক পরিবার থেকে ইসরোর চেয়ারম্যান হওয়ার এই অভিজ্ঞতা কিংবা জীবন যাপন ভীষণ কঠিন ছিল তার কাছে। বারবার বাধা এসেছে। বাধা ঠেলেছেন অনায়াসেই। মনের জোরে সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে।
Advertisement
তামিলনাড়ুর একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল। কিন্তু পরিবারে কেই পড়াশোনা করেনি। তার পরিবারে তিনিই প্রথম উচ্চশিক্ষিত। ১৯৮০ সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
শিবন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, প্রকৌশল নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবা নাকি তাকে সাধারণ স্নাতক হতে বলেছিলেন। বাবার মন বদলাতে টানা এক সপ্তাহ উপবাস করেন। তাতে অবশ্য বাবার মন বদলায়নি। বরং নিজেকেই মত বদলাতে হয়েছিল।
গণিতে ভর্তি হলেও ছেলের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা কতটা তীব্র বাবা ধীরে ধীরে তা বুঝতে পারেন। স্নাতক শেষে জমি বিক্রি করে ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি করান। বাবা নাকি তাকে বলেছিলেন, ‘তুমি যা করতে চেয়েছিলে আমি তোমাকে তা করতে দেইনি। কিন্তু আর তোমাকে বাধা দেব না।’
কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়েও বাধার মুখে পড়েন তিনি। স্কুল পাসের পরে কোন কলেজে ভর্তি হবে তা নিয়ে প্রত্যেক পরিবার নানা বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করে। কোন কলেজের রেজাল্ট কেমন, পড়াশোনা কেমন হয় এসব খোঁজ নিয়েই তবে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। কিন্তু শিবনের ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিল অন্যরকম।
Advertisement
শিবন কোন কলেজে ভর্তি হবেন তা ঠিক করে দিয়েছিলেন তার বাবা। বাড়ি থেকে যে কলেজটি সবচেয়ে কাছে সেখানেই ছেলেকে ভর্তি করিয়েছিলেন। যাতে কলেজ শেষে বাড়ি ফিরে বাবার চাষাবাদে সাহায্য করতে পারেন।
১৯৮২ সালে ব্যাঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। সে বছরই ইসরোর পিএসএলভি তৈরির প্রজেক্টে যুক্ত হন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১৪ সালে ইসরোর লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টারের চেয়ারম্যান করা হয় তাকে। ২০১৮ সালে হন ইসরোর চেয়ারম্যান।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
এসএ/এমএস