দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির দারিদ্র্যের হার নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। মালয়েশিয়ান সরকারের দাবি, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে মাত্র ০.৪ শতাংশ মানুষ। কিন্তু জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়ার দারিদ্র্যের হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হবে পারে।
Advertisement
মালয়েশিয়ান সরকারের দাবির পুরোপুরি বিরোধিতা করে ৩০ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ফিলিপ অ্যালস্টন বলেন, মালয়েশিয়ান সরকারের পরিসংখ্যানগুলো সম্পূর্ণরূপে ভুল ছিল। যাতে বাস্তবতার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। ১১ দিনের মালয়েশিয়া সফর শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অ্যালস্টন।
দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মালয়েশিয়ার দারিদ্র্যের হার ১৯৭০ সালে ছিল ৪৯ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে মাত্র শূন্য দশমিক চার শতাংশে নেমেছে।
তবে এই পরিসংখ্যান সম্পর্কে ফিলিপ অ্যালস্টন বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান পুরোনো পরিসংখ্যান কাঠামোর ওপর নির্ভর করে করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান উচ্চ ব্যয় সত্ত্বেও কয়েক দশক ধরে দারিদ্র্যসীমা একই পর্যায়ে রয়েছে।
Advertisement
অ্যালস্টন আরও বলেন, বিভিন্ন স্বাধীন গোষ্ঠীর দ্বারা পরিচালিত পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, মালয়েশিয়ায় ‘উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য’ রয়েছে এবং এর প্রকৃত দারিদ্র্যের হার প্রায় ১৫ শতাংশ।
সরকারি পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে মনে হবে মালয়েশিয়া দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
অ্যালস্টল বলছেন, এটি অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে বিষয়টি আসলে তা নয়। তবে অ্যালস্টনের এই বক্তব্য সম্পর্কে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়।
অ্যালস্টন আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় দারিদ্র্যসীমায় বলা হয়েছে, প্রতি মাসে পরিবার প্রতি ব্যয় ৯৮০ রিঙ্গিত (২৩৪ ডলার), যা নিতান্তই ‘হাস্যকর’, কারণ, এর অর্থ দাঁড়াবে যে, একটি শহরে চারজনের পরিবারকে প্রতিদিন জনপ্রতি ৮ রিঙ্গিতেরও (২ ডলারেরও) কম খরচে টিকে থাকতে হবে। সত্যিই কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতি ছাড়া এটি প্রায় অসম্ভব।
Advertisement
অ্যালস্টন বলেন, দারিদ্র্যের হার নিম্নমুখি দেখানোর ফলে সমস্যাটিকে লক্ষ্য করে কার্যকর সরকারি নীতিমালাগুলোর অভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে প্রচুর অর্থহীন এবং অকার্যকর কর্মসূচি বর্তমান রয়েছে।
তিনি মালয়েশিয়াকে দারিদ্র্যের সীমা সঠিক পরিমাপের জন্য তাদের পদ্ধতিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে বলেন এবং রাষ্ট্রহীন পরিবার, অভিবাসী কর্মী ও শরণার্থীদের মতো পরিবারকেও এই পরিসখ্যানের আওতায় নেয়ার আহ্বান জানান।
‘যদি মালয়েশিয়া এমন নীতিমালা তৈরি করতে পারে, তাহলেই তারা নিয়মিতভাবে তাদের প্রয়োজনগুলো সমাধান করতে পারে,’- জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ফিলিপ অ্যালস্টন।
জেডএ/জেআইএম