রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তিনটি ছাত্রাবাস সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রমৈত্রীর নেতা রেজওয়ানুল চৌধুরী সানী হত্যার পর থেকে ছাত্রবাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর থেকে এখনো ছাত্রবাসাগুলো খুলে দেয়া হয় নি। ইনস্টিটিউটের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভয় ও আতঙ্কে ইনস্টিটিউট খুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সরকার দলীয় নগরের উচ্চ পদস্থ নেতারাও ইনস্টিটিউট খুলে দেয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন নি।প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ৩৯১১ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। কিন্তু এর বিপরীতে তিনটি ছাত্রবাসে আসন রয়েছে ২৯৮টি। এর মধ্যে ছেলেদের জন্য বরাদ্দ শহীদ মোনায়েম ছাত্রাবাস ও শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ (র.) ছাত্রাবাস মিলে আসন রয়েছে ২১০ এবং মেয়েদের জন্য বরাদ্দ আক্তারুন্নেছা ছাত্রীনিবাসে আসন ছিল ৮৮টি। সানি হত্যার পর থেকেই এই তিনটি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়া হয়। এক হিসেবে দেখা যায়, ৩০০ জন ছাত্র ছাত্রাবাসে থাকলে মাসে দুই হাজার টাকা করে সঞ্চয় হতো। কারণ বাইরে মেস ভাড়া করে থাকলে রুম ভাড়া, খাওয়া খরচ, বিদ্যুৎ বিল ও জ্বালানি খরচসহ এক ছাত্রের মাসে ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই খরচ আরো এক হাজার টাকা বেশি হয়। ফলে ছাত্রাবাসের বাইরে থাকার কারণে তাদের মাসে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। কিন্তু ছাত্রবাসে থাকলে দুই হাজার টাকায় পুরো মাস চলে যেত। সে হিসেবে, সাড়ে পাঁচ বছরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত প্রায় ৪ কোটি টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে।পলিটেকনিকের ছাত্র ইশতিয়াক ও রাসেল জাগো নিউজকে জানান, রাণীবাজার এলাকায় মেস ভাড়া দিয়ে থাকার জন্য মাসে খরচ হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে। কিন্তু ছাত্রাবাসে থাকলে দুই হাজার টাকা সঞ্চয় করা সম্ভব হতো। কারণ ছাত্রাবাসে নাম মাত্র মূল্যে ভাড়া দিতে হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিল দিতে হতো না। ডাইনিংয়ে খাওয়ার কারণে খরচ কম হতো।সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ছাত্রাবাসের ভেতরে ধুলার আস্তরণ পড়েছে। বারান্দায় গাছপালার পাতা ও ময়লা আর্বজনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। চেয়ার-টেবিলে কাঠের পাটাতন উঠে গেছে। এক জায়গায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে চেয়ার টেবিল।শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র.) ছাত্রবাসে রাতে থাকেন ওয়ার্কশপ খালাসী অসিত কুমার ও মিজান। তারা জানান, ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করলে যা হয় সেই রকম অবস্থা। জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতে আমাদের এখানে থাকতে দেয়া হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, বহুদিন ধরে ছাত্রাবাসগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় ওই এলাকাটা বিভিন্ন মাদকসেবীদের আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে। ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থী না থাকায় ছাত্রাবাসের বহু জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। পরে বাধ্য হয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাইট-ফ্যান খুলে এনে স্টোর রুমে জমা করা হয়েছে।ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের ৪র্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সুজল পাহান ও জাকিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রাবাস খুলে দিলে দূরের যে সব শিক্ষার্থী আছেন, তারা থাকতে পারত। যদিও ছাত্রদের অনুপাতে ছাত্রবাসের আসন সংখ্যা খুবই সীমিত তারপরও যে কয়জন থাকত তাতে অন্তত কিছু ছাত্রের দুর্ভোগ কম হতো। বাইরে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে ছাত্রাবাসে থাকার প্রয়োজন হতো না।কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষার্থী রাহাত, সিরাজ ও শামীম জাগো নিউজকে জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত ছাত্রবাসটি খুলে দেয়া সম্ভব হয় নি। খুলে না দেয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নাই। কয়েকদিন আগেও শুনলাম, ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার জন্য না কি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, ছাত্রাবাস খুলে দিলে ভালো হয়। অনেক গরীব মেধাবী শিক্ষার্থী আছেন যারা বেশি টাকা খরচ করে ভাড়া বাসায় থাকতে পারেন না, তাদের অনেক উপকার হয়। যোগাযোগ করা হলে পলিটেকনিক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান রিগেন জাগো নিউজকে জানান, আমরা ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। এর আগে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেছি। অধ্যক্ষ স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, দ্রুত ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেয়া হবে।ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার সভাপতি নূরুজ্জামান হৃদয় জাগো নিউজকে জানান, আমরা চাই ছাত্রাবাসগুলো খুলে দেয়া হোক। কারণ এতে অল্প হলেও ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসন সংকট দূর হবে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবদুর রেজ্জাক জাগো নিউজকে জানান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে সংস্কার করার জন্য বলা হয়েছে। এ জন্য ১২ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে ছাত্রাবাসগুলো সংস্কার করে ছাত্রদের জন্য খুলে দেয়া হবে।শাহরিয়ার অনতু/এসএস/এমএস
Advertisement