দেশজুড়ে

ভয়ে এসআইকে শনাক্ত করেননি গণধর্ষণের শিকার সেই গৃহবধূ

যশোরের শার্শা উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ভয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় গোড়পাড়া ফাঁড়ির এসআই খায়রুলের নাম প্রকাশ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। শুক্রবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।

Advertisement

ওই গৃহবধূ বলেন, ‘আমি খায়রুলকে ভালোভাবেই চিনি। আমাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৮ ও ৪ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আবার বিনা কারণে আমার স্বামীরে ধরে নিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ যখন খায়রুলকে আমার সামনে নিয়ে আসছিল এবং জিজ্ঞেস করছিল- ইনি ছিলেন কি-না। তখন আমি ভাবলাম, সে তো পুলিশের লোক। যখন সে বারেবারে আমার স্বামীরে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে আমি পারবো না। তাছাড়া খায়রুল আমার দিকে এমনভাবে তাকাইছে, তার চোখের ভাষায় আমি বুঝতি পারছি।’

ধর্ষণের সময় এসআই খায়রুল উপস্থিত ছিলেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই গৃহবধূ বলেন, ‘রিপোর্টে তো প্রমাণ আসবে। আর আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তারা বলবে। কারণ তারা আরও ভালো জানে।’

Advertisement

এসআই খায়রুলসহ আরও যে তিন আসামি রয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাদের শাস্তি দেখে আরও ৫/১০ জন মানুষ যেন এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে।’

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বের যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিন শিকাদার এক ‘প্রেস নোটে’ দাবি করেছিলেন, এসআই খায়রুল আলমকে ওই গৃহবধূর সামনে উপস্থিত করা হলে তিনি শনাক্ত করেননি। সেজন্য তার নাম বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শার্শা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম মশিউর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূ সেদিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনেই এসআই খায়রুল সম্পর্কে তার বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাকে কোনো প্রকার ভয়ভীতি বা চাপ দেয়া হয়নি।’

তবে আজ কেন ভয়ের কথা বলছেন এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘হয়তো কেউ তাকে দিয়ে এখন এসব বলাচ্ছে।’

Advertisement

এদিকে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী ও ফোরামের জেলা নেতারা ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা ওই গৃহবধূর খোঁজখবর নেন এবং আইনগত সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন।

প্রসঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে যশোরের ওই গৃহবধূ নিজের ঘরেই গণধর্ষণের শিকার হন। তার অভিযোগ, এসআই খায়রুলসহ চারজন ওই রাতে তার কাছে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে তার স্বামীর বিরুদ্ধে দেয়া ফেনসিডিলের মামলা ৫৪ ধারায় দেখিয়ে হালকা করে দেবেন বলে তারা জানান। ফেনসিডিল মামলায় কারাগারে থাকা তার স্বামীকে কীভাবে ৫৪ ধারায় দেবেন- এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এসআই খায়রুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর খায়রুল ও কামরুল তাকে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন।

পর দিন সকালে ওই গৃহবধূ যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বৃহস্পতিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে গণধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ধর্ষণকারী কারা ছিলেন তা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মিলন/জামাল/আরএআর/এমকেএইচ