ঢাকাই সিনেমায় তিনি উদয় হয়েছিলেন ধুমকেতুর মতো। কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে নবাগত হিসেবে তার অভিষেক হয় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে। সে এক রাজকীয় অভিষেক। প্রথম সিনেমা দিয়েই বাজিমাত করে দিলেন।
Advertisement
এরপর যা করেছেন সবই ইতিহাস, অবিশ্বাস্য। সার্বজনীন দর্শকের নায়ক হয়ে উঠেছেন তিনি। পরিণত হয়েছেন স্টাইল আইকন, তারুণ্যের ক্রেজে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। সবার ঘুম ভাঙলো সালমান শাহকে হারানোর শোক বুকে নিয়ে। রহস্যজনক মৃত্যুতে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এই নায়ক। দেখতে দেখতে ২৩ বছর হয়ে গেল সালমান শাহ নেই৷
চোখের দেখায় তিনি নেই৷ তবে সালমান আছেন এদেশের সিনেমার গর্বিত ইতিহাসে অমর নায়ক হয়ে। সালমান আছেন নায়কদের নায়ক হয়ে আর নায়িকাদের অধরা স্বপ্ন হিসেবে।
Advertisement
সালমান ভক্তরা প্রিয় নায়কের সব অজানাকে জানতে চান। তাদের দারুণ আগ্রহ সালমানের নায়িকাদের ঘিরে। কে কোথায় আছেন আজ সালমানের নায়িকারা?
অল্প দিনের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন সালমান। সেখানে সর্বাধিক ১৪টি সিনেমার নায়িকা হিসেবে ছিলেন শাবনূর। এরপর চারটি সিনেমায় তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন মৌসুমী ও তিনটি ছবিতে শাবনাজ।
এছাড়াও তার নায়িকা হিসেবে দেখা গেছে লিমা, শিল্পী, সোনিয়া, বৃষ্টি, কাঞ্চি, শ্যামা, সাবরিনা, শাহনাজকে। চলচ্চিত্রজীবনে মোট ১১ জন নায়িকার নায়ক ছিলেন সালমান শাহ।
আর ছোটপর্দায় তিনি জুটি বেঁধেছিলেন তমালিকা কর্মকার, শমী কায়সার ও তানভীন সুইটির সাথে।
Advertisement
নায়িকাদের মধ্যে বর্তমানে সিনেমাতে নিয়মিত আছেন একমাত্র একজন। তিনি মৌসুমী। এই নায়িকার সঙ্গে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েই সিনেমায় যাত্রা করেন সালমান শাহ। এরপর এই জুটিকে দেখা গেছে অন্তরে অন্তরে, স্নেহ ও দেনমোহর ছবিতে। মৌসুমী দেশেই বাদ করছেন স্বামী-সন্তান নিয়ে। বেছে বেছে কাজ করছেন সিনেমায়। তার দেখা মেলে মাঝেমাঝে ছোটপর্দাতেও।
চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের জুটির শুরু হয় ‘তুমি আমার’ সিনেমা দিয়ে। এরপর এই জুটি জনপ্রিয়তার উচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল। সালমানের মৃত্যুর পর শাবনূর রিয়াজ-ফেরদৌসদের সঙ্গেও জুটি বেঁধে সফল হন। শাবনূরের ক্রেজ এখনো দর্শকের অন্তরে বহমান। তাকে সিনেমায় দেখতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রায়ই অনেকে নানা রকম পোস্ট দেন। কিন্ত শারীরিক অসুস্থতার জন্য অভিনয় থেকে সরে আছেন শাবনূর। একমাত্র পুত্র আইজান নেহানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতেই দিন কাটে তার। সেখানে তার সঙ্গে থাকেন ছোট দুই ভাইবোন৷
চিত্রনায়িকা শাবনাজের সঙ্গে ‘আঞ্জুমান’, ‘আশা ভালোবাসা’ ও ‘মায়ের অধিকার’ নামের তিনটি ছবিতে জুটি বাঁধেন সালমান শাহ। এই দুই তারকার রসায়ন মন জয় করেছিলো দর্শকের৷ সালমানের অকাল মৃত্যু না হলে হয়তো আরও অনেক সুপারহিট ছবিতে দেখা যেত তাদের৷
শাবনাজ বর্তমানে অভিনয় থেকে দূরে। ঢাকার উত্তরার বাসিন্দা৷ চিত্রনায়ক নাঈমকে বিয়ে করেছেন। দুই মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার তার। চিত্রনায়িকা লিমা ‘প্রেমযুদ্ধ’ ও ‘কন্যাদান’ ছবিতে সালমানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। কিন্তু তাদের জুটি খুব একটা সফল ছিলো না। এরপর আর কোনো ছবিতে দেখা যায়নি তাদের। লিমা সিনেমা ছেড়ে চলে যান নব্বই দশকের শেষদিকে। এরপর দীর্ঘদিন পার্লার ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন নিউ মার্কেট ও মোহাম্মদপুরে। বর্তমানে এই নায়িকা সপরিবারে আমেরিকাতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিদেশে চলে যাওয়া সালমানের নায়িকাদের তালিকায় আছেন ‘এই ঘর এই সংসার’ ছবির নায়িকা বৃষ্টি। তিনি থাকেন আমেরিকাতে। ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ ছবির সোনিয়া আছেন লন্ডনে। বিদেশে থিতু হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে সালমানের ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবির নায়িকা কাঞ্চি। তবে তিনি কোন দেশে রয়েছেন সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও জানা গেল, রাজধানীর ইস্কাটনে বাস করেন সালমানের ‘সত্যের মৃত্যু নেই’ ছবির নায়িকা শাহনাজ। অভিনয় ছেড়ে ধর্ম কর্মে মন দিয়েছেন তিনি।
চিত্রনায়িকা শিল্পীকে সালমানের সঙ্গে দেখা গিয়েছিলো ‘প্রিয়জন’ ছবিতে। এই নায়িকা ২০০০ সালে সিনেমা থেকে বিদায় নেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে কাজ করেছেন টিভি নাটকে। এরপর নিজেকে গুটিয়ে নেন। বর্তমানে রাজধানীর বনানীতে এক পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে দিন কাটে তার।
সালমানের সঙ্গে ‘আশা ভালোবাসা’ ছবিতে শাবনাজের পাশাপাশি ছিলেন আরও এক নায়িকা। সাবরিনা তার নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই নায়িকা এখন নারায়ণগঞ্জে থাকেন। স্বামী, সন্তান, সংসার নিয়ে বেশ ভালোই আছেন তিনি।
সালমানের একমাত্র মৃত নায়িকা শ্যামা। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘শুধু তুমি’ সিনেমায় শাবনূরের পাশাপাশি দেখা গিয়েছিল তাকে৷ সালমানের মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরই তার মৃত্যু হয় সড়ক দূর্ঘটনায়।
সালমানের নাটক জীবনের নায়িকা তমালিকা কর্মকার বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। আরেক নায়িকা তানভীন সুইটি রয়েছেন দেশেই। তবে অভিনয়ে কম দেখা মেলে তার৷ অন্যদিকে নাটকে সালমান সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন শমী কায়সারের সঙ্গে। দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বও ছিলো। সালমানকে হারানোর শোক বয়ে বেড়ান আজও শমী। তিনি এখন অভিনয়ে অনিয়মিত। ব্যস্ত হয়েছেন ব্যবসা আর রাজনীতিতে।
এমএবি/এলএ/এমএস