ভারতীয় ভূখণ্ডের ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে চীনা সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তৈরি করে ফেলেছে একটি ঝুলন্ত সেতুও। অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি বিধায়কের এমন দাবি ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ভারত-চীন সীমান্তের চাগলাগাম এলাকায়। তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী অবশ্য এই দাবি উড়িয়ে দিলেও নয়াদিল্লিতে এ নিয়ে চলছে তোলপাড়।
Advertisement
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই এলাকায় ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনা সেনা বা নাগরিকের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ মেলেনি। তারপরও ওই এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে।
রাজ্যের বিজেপি সভাপতি ও অরুণাচল পূর্ব কেন্দ্রের সাংসদ টাপির গাও সম্প্রতি বিভিন্ন সাংবাদ মাধ্যমে দাবি করেন, চাগলাগামের ডিমারু নালার ওপর একটি ‘সাসপেনশন ব্রিজ’ নজরে এসেছে আদিবাসীদের। ঘন জঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকার গাছ কেটে কাঠ চেরাই করে ওই সেতুটি তৈরি করেছে চীনা সেনা। দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট সব দফতরে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন টাপির গাও।
যেখানে সেতু তৈরির কথা বলেছেন টাপির গাও, সেই ডিমারু নালা অঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। জনবসতি খুব কম, রয়েছে প্রচুর পাহাড়ি ঝর্না ও নালা। অসংখ্য ‘ফিশ টেল’ (পাতার আকৃতি মাছের লেজের মতো বলে এমন নাম) প্রজাতির লম্বা গাছ এবং নিচে ঘন জঙ্গলে ঘেরা দুর্গম ওই এলাকা। শিকার এবং ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করতে জনজাতি শ্রেণির কিছু মানুষের আনাগোনা রয়েছে। তবে সেনা জওয়ানরাও রুটিন টহলদারি পরিচালনা করেন এ এলাকায়।
Advertisement
চীন-অরুণাচল সীমান্ত ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা ম্যাকমোহন লাইন থেকে চাগলাগামের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। চাগলাগাম থেকে আবার ডোইমুর নালার দূরত্ব ২৫-৩০ কিলোমিটার। ফলে টাপির গাওয়ের দাবি ঠিক হলে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৬০-৭০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে চীনা ড্রাগনরা। দিল্লিতে বিষয়টি জানানোর পরই এ নিয়ে কার্যত তোলপাড় পড়ে যায়। ভারতীয় সেনাসহ কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শুরু হয় নড়াচড়া।
অবশেষে বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনী বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেয়, টাপির গাওয়ের দাবি ঠিক নয়। সেনাবাহিনীর বক্তব্য, ‘এই ধরনের কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যেখানকার কথা বলা হয়েছে, সেটা ‘ফিশ টেল’ এলাকা। অন্যান্য কয়েকটি এলাকার মতো ওই এলাকাতেও সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে। ডিমারু নালার ওপরে যে জায়গার কথা বলা হয়েছে, সেখানে এই ধরনের কোনও সেতু সেনাবাহিনীর নজরে আসেনি।’
ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ওই এলাকা ঘন জঙ্গলে ঢাকা। নালা-ঝোরা ও পাহাড়ি চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা ওই এলাকায় হেঁটে ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনে চলাফেরা করা সম্ভব নয়। কিন্তু যেহেতু সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তাই ভারত এবং চীন দু’দেশের সেনা জওয়ানরা বর্ষাকালে টহলদারির জন্য নালাগুলোর ওপর অস্থায়ী সেতু তৈরি করে। তবে এটা নিশ্চিত যে চীনের সেনা বা কোনো নাগরিকের স্থায়ী উপস্থিতি ওই এলাকায় পাওয়া যায়নি। তবু কড়া নজরদারি রয়েছে সেনাবাহিনীর।’
বিতর্কিত সীমান্ত এলাকার সমস্যা মেটাতে ভারত-চীন বোঝাপড়া রয়েছে। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সীমান্ত সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা বা বিতর্ক মেটাতে ভারত চীনের মধ্যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক ও সেনাবাহিনীর পদ্ধতি রয়েছে। নয়াদিল্লি-বেইজিং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অনুসারেই দু’দেশের সীমান্ত এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশ বদ্ধপরিকর। আনন্দবাজার।
Advertisement
এসআইএস/পিআর