‘দুই দল মিলিয়ে এক জন পেসার। আফগানিস্তানে ইয়ামিন আহমাদজাই ০.৭৫ এবং বাংলাদেশে সৌম্য সরকার ০.২৫’ - টসের পর দুই দলের একাদশ দেখে প্রেসবক্সে উপস্থিত এক সিনিয়র সাংবাদিকের মন্তব্য ছিলো এমন। এ মন্তব্য পুরোপুরি সঠিক এবং যথাযথ।
Advertisement
কেননা কোনো বিশেষজ্ঞ পেসার রাখা হয়নি বাংলাদেশ দলে, আফগানিস্তান দলে আছেন কেবল মিডিয়াম ফাস্ট বোলার ইয়ামিন আহমেদজাই। যাকে পুরোপুরি ফাস্ট বোলার বলার সুযোগ নেই। তাই মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকারকে ধরে বলা চলে, পুরো ম্যাচে দুই দল মিলেই খেলাচ্ছে মাত্র এক পেসার।
দুই দলের এমন একাদশ দেখে যে কেউ নিশ্চিতভাবে পাবেন একটি পরিষ্কার বার্তা। তা হলো ম্যাচের উইকেট নিশ্চয়ই র্যাংক টার্নার তথা স্পিনারদের জন্য স্বর্গ। যেখানে বলে থাকবে অসমান বাউন্স এবং হুটহাট বাঁক নেবে ডেলিভারি। কিন্তু সত্যিই কি এমন ছিলো চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের এই ম্যাচের উইকেট?
খালি চোখে দেখা গিয়েছে উইকেটে ঘাসের ছিটেফোঁটা নেই, তবে রয়েছে মরা ঘাসের উপস্থিতি। এছাড়া প্রথম দিনের পিচ হওয়ায় তেমন কোনো ফাটলও দেখা যায়নি পিচে। এমনকি পুরো দিনে বাংলাদেশের বোলিংয়ে কোনো ডেলিভারিই অস্বাভাবিক আচরণ করেনি। খুবই সাবলীলভাবে ব্যাটিং করেছে আফগান ব্যাটসম্যানরা।
Advertisement
এ তো ছিলো মাঠের বাইরে থেকে দেখা পর্যবেক্ষণ। যারা খেলেছেন মাঠে, তারা কী ভাবছেন এ উইকেটের ব্যাপারে? এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো উত্তর দিতে পারতেন সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহ। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে পাওয়া গেলো তাকে। উইকেটের আচরণ বিষয়ক প্রশ্নে তিনি উত্তর দিলেন পশতু ভাষায়, পাশে বসে ইংরেজিতে অনুবাদ করে জানালেন ম্যানেজার।
যার সারমর্ম ছিলো, ‘এ উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ সহজ ছিল। বলটা যখন নতুন ছিল, তখন খানিক সমস্যা করছিল ব্যাটসম্যানদের। তবে সময় কাটিয়ে উইকেটে সেট হওয়ার পর ব্যাটিং খুবই সহজ হয়ে যায়।’
অবশ্য রহমত শাহর ব্যাটিং সহজ হওয়ার পেছনে কাজ করেছে তার ব্যক্তিগত পরিকল্পনাও। বাংলাদেশের বোলারদের টার্ন বন্ধ করার জন্য বারবার উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে খেলেছেন মিডউইকেট দিয়ে, স্টাম্প ছেড়ে অফসাইডে জায়গা করে খেলেছেন পয়েন্ট-থার্ডম্যান অঞ্চল দিয়ে। যা তার ব্যাটিং আরও উপভোগ্য করেছে।
নিজের ব্যাটিং সম্পর্কে রহমত শাহ বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিলো সামনের পায়ে খেলবো। তারা ভালো লাইন-লেন্থে বোলিং করছিলো এবং ফিল্ড সেটআপও দারুণ ছিলো। যে কারণে আমার পক্ষে রান করাটা অত সহজ ছিলো না। তাই আমি ক্রিজ ব্যবহার করছিলাম এবং সামনের পায়ে এগিয়ে আসছিলাম।’
Advertisement
বাংলাদেশি স্পিনারদের বিপক্ষে এ পরিকল্পনা এঁটে সফল হয়েছেন আফগান রহমত শাহ। তাহলে কি ভুল ছিলো বাংলাদেশের পরিকল্পনায়? নাকি প্রত্যাশামাফিক উইকেটই পায়নি সাকিব আল হাসানের দল?- এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন দিনের সেরা স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
বাঁহাতি এই স্পিনারের অনুভব, ‘আমরা আশা যেমনটা করেছিলাম উইকেট দেখে তেমনটাই মনে হয়েছে। অনুশীলনের সময় যখন আমরা উইকেট দেখেছি, তখন বোঝা গিয়েছে এখানে পেস বোলার নিয়ে আসলে লাভ হবে না। পেস বোলারকে হয়তো দুই তিন ওভারও বল করাতে পারবে না। অতএব স্পিনারদের খেলানোই ভালো। উইকেট দেখে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ভালোই হয়েছে।’
তাহলে বোলিংটা কি হয়েছে প্রত্যাশা অনুযায়ী? মুখে হাসি এনে তাইজুলের উত্তর, ‘আসলে উইকেট যেমন, বোলাররা তেমনই বল করেছে। হয়তো এর থেকে একটু ভালো করতে পারতো। ভালো করতে পারতো মানে ৮টা ৯টা উইকেট এখন থাকতো তা নয়। উইকেটের আচরণ হিসেবে ৫ উইকেট ঠিক আছে। এর চেয়ে তাদের আরো ভালো করার সুযোগ ছিল। তারা আজ ৩০০ পার করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকতো না।’
এসএএস/এমএমআর/এমকেএইচ