নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে প্রেমিকার নামে গোপনে ব্যাংক হিসাব খুলে লাখ লাখ টাকা লেনদেন করেন এক ইউএনও। অথচ গোপন ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা জানেন না তার কথিত প্রেমিকা।
Advertisement
কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রেমিকার ব্যক্তিগত কাগজপত্র নিয়ে স্বাক্ষর জাল করে অ্যাকাউন্টটি খোলা হয়। আসিফ ইমতিয়াজ নামে প্রশাসন ক্যাডারের ৩০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত।
এরই মধ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ও প্রেমিকাকে না জানিয়ে তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের ঘটনায় ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজকে বদলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আবদুল লতিফ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলির বিষয়টি জানানো হয়।
বর্তমানে তাকে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ বিভাগের ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর সার্টিফিকেট প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। সেখানে সহকারী নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। আগামী রোববার তাকে ওই পদে যোগ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Advertisement
এর আগে প্রেমিকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে রীতিমতো সাপের সন্ধান পায়। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আয়বহির্ভূত বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের কারণে এ কর্মকর্তা ভারসাম্য হারিয়েছেন। নিজের অফিশিয়াল পরিচিতির মর্যাদা সুরক্ষার কথা বেমালুম ভুলে বিয়েবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। প্রেমিকাকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ভাড়া ফ্ল্যাট ও আবাসিক হোটেলে সময় কাটিয়েছেন। বান্ধবীকে অন্তঃসত্ত্বা করে বিপাকে পড়েন ইউএনও আসিফ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা পদে কর্মরত থাকাবস্থায় স্থানীয় একটি ব্যাংকের কদমতলী শাখায় প্রেমিকার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সেখানে কয়েক মাস ধরে মোটা অংকের টাকা লেনদেনও করেন আসিফ ইমতিয়াজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে না করায় বিষয়টি নিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে বিরোধ বাধলে ব্যাংকে গোপন লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
কয়েক মাস আগে আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক ও গর্ভের সন্তান নষ্ট করার হুমকি দেয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন ওই নারী। তখন জানা যায় ওই নারীকে না জানিয়ে তার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে লাখ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন আসিফ। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি করে।
সেখানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হারুন অর রশীদকে আহ্বায়ক করা হয়। ১৪ আগস্ট জেলা প্রশাসকের কাছে বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন জমা দেন হারুন অর রশীদ।
Advertisement
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় জনৈক শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় হয় আসিফ ইমতিয়াজের। তখন চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এলএ শাখায় ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রাথমিক পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন আসিফ। একপর্যায়ে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফ্ল্যাট ও আবাসিক হোটেলে বসবাস শুরু করেন। ততদিনে গোপনে বিয়েবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি ঘনীভূত হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে না চাইলে বিপত্তি ঘটে। ভুক্তভোগী নারী প্রতিকার চেয়ে ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হারুন অর রশীদকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, গোপন ব্যাংক হিসাব পরিচালনার যে অভিযোগ পাওয়া যায় তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত চেয়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চট্টগ্রামের কদমতলী শ্যাখা ব্যবস্থাপককে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার আগে এ বিষয়ে কোনো তথ্য ব্যাংক থেকে জানানো হয়নি। তদন্ত রিপোর্টটি জমা দেয়ার কয়েক দিন পর একটি খাম আসে। কিন্তু সেটি আর আমি রিসিভ করিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে হারুন অর রশীদ বলেন, তদন্তে কী পেয়েছি সেটি বলা যাবে না। উভয়পক্ষের দেয়া তথ্যপ্রমাণ ও সরাসরি সাক্ষ্যগ্রহণের ভিত্তিতে যা পেয়েছি তা আমার জ্ঞান বিবেচনা মতে বিচার-বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী বলেন, আসিফের সঙ্গে ২০১৮ সালের মে মাসে আমার সম্পর্ক হয়। এরপর কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেন তিনি। অথচ আমার সম্মতি ও স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংকের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যক্তিগত সেই কাগজপত্র দিয়ে আমার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে অবৈধ লেনদেন শুরু করেন। ভয়াবহ এ জালিয়াতির ঘটনা জানতে পেরে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি। কারণ আসিফ ইমতিয়াজ তখন একজন সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু এ ঘটনার পরই তার আসল রূপ প্রকাশ পায়। ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর মধ্যে আমার যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে।
এর আগে গত ২২ আগস্ট জামালপুরের ডিসির একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে ডিসি আহমেদ কবীরের সঙ্গে তার অফিসের এক নারীকর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়।
এ নিয়ে জামালপুরসহ সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ওএসডি হলেন জামালপুরের ডিসি। একই সঙ্গে ডিসি আহমেদ কবীরকে সরিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ এনামুল হককে জামালপুরের নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
মোসাইদ রাহাত/এএম/এমকেএইচ