পারভেজ আর মো. মহসিন আলীর মধ্যে ছিল পূর্বশত্রুতা। গত বুধবার বিকেলে প্রেমিকা নিয়ে ঢাকা উদ্যানে বেড়াতে গিয়ে পারভেজের টিজের শিকার হয় মহসিন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও তর্ক-বিতর্ক হয়। সেখান থেকে ফিরে ১৫-২০ জনের গ্রুপ নিয়ে চাঁদ উদ্যানের সামনে অপেক্ষা করে পারভেজ। মহসিন চাঁদ উদ্যান এলাকায় একটি চায়ের দোকানে বসে। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা পারভেজসহ ১০-১৫ জন তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর দুজনকে গ্রেফতার করতে পারলেও হত্যার মূলনায়ক পারভেজ পলাতক।
Advertisement
পুলিশ বলছে, পারভেজ ও মহসিনের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ছাড়াও ছিল কিশোর গ্যাং কোন্দল। পারভেজ ছিল ‘আতঙ্ক’ নামক গ্রুপের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ের। নিহত মহসিন ‘ফিল্ম ঝির ঝির’ গ্রুপের সদস্য। আধিপত্য বিস্তারে এলাকায় দুই গ্রুপে কোন্দল থাকলেও স্পষ্ট ছিল না। তাছাড়া পারভেজ ও নিহত মহসিনের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা ছিল না।
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারভেজের ‘আতঙ্ক’ গ্রুপের হামলায় মহসিন নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলা নং ২৪। নিহতের বড় ভাই মো. ইউসুফ আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলো- মো. আসিফ (১৮), রকি (১৮), মিজান (১৮), শিশির (১৭), কালু (১৭), সাইফুল (১৭), সুমন (১৮), জাহিদ (১৮), রুবেল (১৮), সোহেল (১৮), রিয়াজ (১৭), রাসেল (১৮) ও সাগর (১৮)। এদের মধ্যে মো. আসিফ ও রকিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরিচয় শনাক্ত ও জড়িত-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে।
Advertisement
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের এডিসি (পদোন্নতি পেয়ে এসপি) ওয়াহেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মোট চারজনকে আটক করেছি। এদের মধ্যে দুজনের নাম এজাহারে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, তাদের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ছিল। গতকাল (বুধবার) যখন মহসিন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঢাকা উদ্যানে ঘুরতে যায় তখন পারভেজের সঙ্গে মহসিনের বাগবিতণ্ডা হয়। পারভেজ টিজ করেছিল ও পূর্বশত্রুতার জেরে অপমান অপদস্ত করতে গেলে মহসিনও পাল্টা বাগবিতণ্ডা ও গালিগালাজ করে। প্রতিশোধ নিতেই পারভেজ সেখান থেকে ফিরে গ্যাং নিয়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহসিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
এডিসি ওয়াহেদুল ইসলাম আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত ও দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যই স্কুলে অনিয়মিত কিংবা স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া। অধিকাংশই ঢাকা উদ্যানের ভেঙে যাওয়া বস্তির বাসিন্দা। কারো বাবা গার্মেন্টে চাকরি করেন কেউবা টাউন হলে মাছের ব্যবসা। এর সাথে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলছে। হত্যার পেছনে আরও কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। ছোট-বড় নয়, অপরাধী হলে কাউকে ছাড় নয়। এলাকায় কিশোর গ্যাংবাজি বন্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Advertisement
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ হাউজিংয়ের পাওনিয়ার গলিতে কালভার্টের পাশে আড্ডারত অবস্থায় বেশ ক’জন যুবক এসে মহসিনের কলার ধরে টেনে নিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। মহসিনকে বাঁচাতে গেলে সাব্বির, রাকিব ও রুবেলকেও তারা আঘাত করে। এতে সবাই আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে চিকিৎসকরা মহসিনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মহসিন স্থানীয় চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে পড়তো।
বাকি আহত তিনজনের মধ্যে সাব্বির (১৭) ও রাকিব (১৭) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং রুবেলকে (২৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত সাব্বির ও রাকিব নিহত মহসিনের সঙ্গেই লেখাপড়া করতো। রুবেল একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করে।
জেইউ/এসএইচএস/এমকেএইচ