বিশেষ প্রতিবেদন

সাক্ষীরা জানেন না মামলার খবর

>> বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে ২১০২ মামলা>> ৩৬৭ মামলার আসামিদের অব্যাহতি >> সাজা হয়েছে মাত্র ২০ মামলার আসামির

Advertisement

বর্তমান বিশ্ব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন অনেকটাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। একুশ শতকে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শপথ নিয়েছে বর্তমান সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এ যুগে অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। অপরাধ ঠেকাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি) করা হয়। পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর) রূপান্তরিত করা হয়। এ আইনে উপাদান ছাড়াই দায়ের হয় পিটিশন মামলা, অধিকাংশ মামলার সাক্ষীরা জানেন না মামলার খবর, অন্যদিকে দালিলিক প্রমাণও পাওয়া যায় না। সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজে না পাওয়ায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত (২০১৯ সালের ৩১ জুলাই) তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ২১০২টি মামলা বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে এসেছে। এর মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ২০টি মামলার আসামিদের। সাক্ষ্যপ্রমাণে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৬৭টি মামলার আসামিদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

Advertisement

অব্যাহতির আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন, ‘মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় তা লিপিবদ্ধ করি। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষীপ্রমাণও পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিশেষজ্ঞ মতামতেও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সাক্ষীরা মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। দালিলিক প্রমাণও পাওয়া যায়নি। সাক্ষ্যপ্রমাণে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করছি।’

বিচারক আদেশে বলেন, ‘মামলার নথিসংযুক্ত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করলাম। অভিযোগ প্রমাণে কোনো উপাদান না থাকায় চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করে আসামিকে অব্যাহতি দেয়া হলো।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে কাউকে হয়রানি করা খুব সহজ। তাই হয়রানির জন্য অনেকে এ আইনকে বেছে নিচ্ছেন। এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করলে অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।

অব্যাহতি- ১

Advertisement

চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী থানায় ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা করেন রাজমিস্ত্রি আবছার। অভিযোগ, দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছোট বোনের কিছু অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন তারই আপন মামাতো ভাই ফোরকান।

মামলার অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা এক ভাই ও তিন বোন। আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আমার ছোট বোন শাবনুর আক্তার (ছদ্মনাম) জুলধা স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আইডি মো. শাজান নামীয় হতে আসামি ফোরকান আমার আপন ছোট বোন শাবনুর আক্তার ও আমার ছবি এডিট করে মিথ্যা ও অশ্লীলভাবে স্ট্যাটাস দেন। পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়া জানতে পারি, আসামিদের সঙ্গে আমাদের জায়গাজমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। তাই সামাজিকভাবে আমাদের হেয়প্রতিপন্নের জন্য আমার বোনের এবং আমার ছবি এডিট করে অশ্লীলভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।’

২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসাইন আসামি ফোরকানের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তাকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দানের প্রার্থনা করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় তা লিপিবদ্ধ করি। আসামি ফোরকানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। এছাড়া যে ফেসবুকের আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছে তার লিংক সিআইডির বিশেষজ্ঞ মতামতে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই আসামি ফোরকানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অভিযোগর দায় হতে অব্যাহতির আবেদন করলাম।‘

২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অব্যাহতির আবেদনটি গ্রহণ করে তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন।

বিচারক আদেশে বলেন, ‘মামলার নথি সংযুক্ত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করলাম। আসামি ফোরকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের মতো কোনো উপদান না থাকায় পুলিশের দেয়া চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করা হলো। আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।‘

মামলার বিষয়ে বাদী আবছার জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার ভিকটিম শাবনুর আমার ছোট বোন। আসামি ফোরকান আমার আপন মামাতো ভাই। তাদের সঙ্গে জায়গাজমি নিয়ে আমাদের ভেজাল চলছে। ফোরকান আমার বোনের অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলার রায় তাদের পক্ষে নিয়ে যায়। আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’

মামলার আসামি ফোরকান বলেন, ‘জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মোটেও সত্য নয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা ও হয়রানির জন্য মামলা করা হয়েছে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার ঘটনার বিষয়ে আমি আশপাশের সাক্ষীদের জিজ্ঞাসা করি। তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। এছাড়া সিআইডিতে ফেসবুকের লিংকটি পরীক্ষার জন্য পাঠালে তারা এ বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি বলে মতামত দেন। তাই আসামিকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করি।’

অব্যাহতি- ২

২০১৬ সালের ২ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় ড. সৈয়দ আল-আমীন রোমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় একটি মামলা করেন। আসামি করা হয় তার ভগ্নিপতিসহ আরও অনেককে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী। ১৯৯৩ সালে আমার খালাতো বোন ফাহিমা আক্তার চৌধুরীর (ছদ্মনাম) সঙ্গে বিবাদী সৈয়দ মোহাম্মদ আকবর কবিরের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর বিবাদী আমার বোনকে নিয়ে কানাডায় চলে যান। কানাডায় অবস্থানের সময় বিবাদী আমার বোনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। পরিবারিক জীবনে আমার বোনের দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বিবাদী আমার বোনের নামে কানাডায় থাকা ছয়টি অ্যাপার্টমেন্ট, তিনটি রেস্টুরেন্ট, দুটি মার্সিডিজ গাড়ি, গোল্ড ৪০০ ভরি, ১০টি ডায়মন্ড সেট, ডেভিড ও ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উত্তোলনসহ তার নামে সম্পত্তি করে নেয়। পরবর্তীতে তিনি সম্পত্তি বিক্রি করে নতুন করে বসবাসের জন্য মন্ট্রিয়াল হতে অন্য প্রভিন্স ভ্যাঙ্কুভার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় চলে যান।’

‘২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আমার বোন ও তার সন্তানরা সপরিবারে বাংলাদেশে এসে শাহবাগের আমার বোনের ফ্ল্যাটে ওঠেন। ফ্ল্যাটে অবস্থানকালে বিবাদী ঝগড়াবিবাদ করে আমার বোনের সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি করেন। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বিবাদী তার সহযোগীরা (নাসরিন আরা বেগম, হুমায়ূন কবির মিলন, ফজলুল কবির সুমন, রত্না, শওকত হোসেন) পরস্পর যোগসাজসে আমার বোনের ছবি এডিট করে অশ্লীলভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন। এমনকি আমার আত্মীয়স্বজন ও ছোট বাচ্চাদের ফেসবুকে আইডিতে অশ্লীল ছবিগুলোতে ইনবক্স করেন। ফলে আমার বোন ও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত, মানসম্মানহানিসহ সমাজিকভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’

২০১৭ সালের ২৭ জুলাই সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সুব্রত কুমার সাহা আসামিদের অব্যাহতি দানের সুপারিশ করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলার বাদী ও সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করি। মামলার তদন্তকালে ঘটনাটি সত্য প্রতীয়মান হলেও এজাহারনামীয় আসামীগণ উক্ত ঘটনা ঘটিয়েছেন মর্মে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

‘মামলাটির সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ ও দালিলিক সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে মামলার ঘটনাটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা অনুযায়ী সত্য বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও এজাহারনামীয় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের মতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় মামলার দায় হতে তাদের অব্যাহতি দানের প্রার্থনা জানিয়ে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করিলাম।’

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আসামিদের অব্যাহতি প্রদান করেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আদেশে বিচারক বলেন, ‘আজ পুলিশ রিপোর্ট গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। নথি সংযুক্ত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করিলাম। অভিযোগ প্রমাণে কোনো উপদান না থাকায় চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণ করা হলো। আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হলো।’

ড. সৈয়দ আল-আমীন রোমান মামলার বিষয় বলেন, ‘আসামিরা মোবাইল নম্বর ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রতি রাতে আমার বোনকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে মেরে ফেলার জন্য বিভিন্ন আজেবাজে কথা ও হত্যার হুমকি প্রদান করেছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমি মামলাটি দায়ের করি।’

মামলার আসামি শওকত হোসেন বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। মামলার বাদী ড. সৈয়দ আল-আমীন রোমানকেও আমি চিনি না।’

সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক সুব্রত কুমার সাহা বলেন, ‘মামলার ঘটনার বিষয় সাক্ষীরা সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। এছাড়া দালিলিক প্রমাণে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই তাদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।’

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে যেসব মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেগুলোর প্রায় সবগুলোরই একই দশা। কোনোটার সাক্ষীরা জানেন না মামলার খবর, আবার কোনোটার দালিলিকভাবে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি বিশ্লেষকরা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা প্রত্যেক মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার ফলে একদিকে তিনি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হন। অপরদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হন। মিথ্যা মামলার ফলে মানুষের স্বাধীনভাবে চলাফেরা বাধাগ্রস্ত হয়। নানাভাবে হয়রানির শিকার হন তারা। তাই কারও বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার আগে তা সত্য কি-না, যাচাই করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেখতে হবে। অহেতুক হয়রানির জন্য কেউ যদি মামলা করেন তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

এ বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে অনেক সময় ভিকটিমরা দেরিতে অভিযোগ করেন। এ কারণে মামলার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় ফেক আইডি দিয়ে অনেকে অপরাধ সংঘটিত করেন। তা আমাদের জন্য চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার অনেক সময় যে ইউআরএলে (URL) পোস্ট দেয়া হয় তা সঠিকভাবে না দেয়ায় অপরাধীকে খুঁজে পাওয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় মামলার সঠিক সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেয়া হয় না। ফেসবুকে অনেকের সঙ্গে অনেকের বন্ধুত্ব থাকে। এ কারণেও অনেকে ওইসব পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করে থাকেন। অথচ তারা পোস্টকারীকে ভালোভাবে চেনেনও না। মামলার বিষয়ে তাদের সাক্ষ্য নেয়া হলে তারা তো এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারবেন না।’

মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে গাফিলতি আছে কি-না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইনটি নতুন। তদন্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দক্ষতার অভাব রয়েছে। সারাদেশে তদন্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’ ৫৭ ধারায় মামলা করার আগে পুলিশ সদর দফতরের আইন শাখার পরামর্শ নিতে হয়। এরপরও কেন আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে যে ঘটনা সত্য মনে হয় সে ধরনের মামলা নেয়া হচ্ছে। কিছু কিছু সময় দু-একটা মামলার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়ে যায়। সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজে না পাওয়ায় আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।’ ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, মামলাগুলো তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্ত সংস্থাকে আরও সচেতন হতে হবে। এছাড়া মামলা করার ক্ষেত্রে বাদীকেও সচেতন হতে হবে। যারা অন্যকে হয়রানির জন্য মামলা করেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম বলেন, মামলার পর যে ফেসবুক থেকে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। আইটি রিপোর্ট বা ফরেনসিক রিপোর্টে এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তথ্য না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

তিনি আরও বলেন, মামলার পর সাক্ষীদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। এটার একটা কারণ হতে পারে, মামলাটি হয়রানির জন্য করা হয়েছে। অরেকটি কারণ হতে পারে, সঠিক সাক্ষীদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় না। এসব কারণে আমাদের দেশের সাক্ষ্য আইনটি পরিবর্তন করা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে অন্যকে হয়রানি করা খুব সহজ। এ আইনে কেউ গ্রেফতার হলে সহজে জামিন পান না। অন্যকে হয়রানির জন্য অনেকে মিথ্য গল্প সাজিয়ে মামলা করেন। যারা এ ধরনের মিথ্যা মামলা করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে অপরাধ অনেকটা কমে আসবে।

জেএ/এমএআর/পিআর