খেলাধুলা

‘অল স্পিন’ পরিকল্পনা বুমেরাং হবে না তো?

পাঁচদিনের ম্যাচ, ১৫ সেশনের খেলা। শেষ হয়েছে একদিনের মাত্র ৩টি সেশন। এখনও বাকি অনেক খেলা। ফলে আগেভাগেই চূড়ান্ত কিছু বলা ঠিক নয়। তবু সকালের সূর্য খানিক হলেও আভাস দেয় সারাদিনের। আর তা যদি সত্য হয়, তাহলে চট্টগ্রাম টেস্টে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কঠিন সময়ই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।

Advertisement

ঢাকায় অনুশীলন ক্যাম্প শেষ করে চট্টগ্রামে পৌঁছাতেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো, আফগানদের বিপক্ষে স্পিন স্বর্গ বানিয়ে খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। যে কারণে একাদশে থাকবে স্পিনারদের আধিক্য। কিন্তু তাই বলে বোলিং আক্রমণের সবাই হবেন স্পিনার, এমনটা ঘুণাক্ষরেও হয়তো আশা করেনি কেউই। টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টসের পর একাদশ জমা দেয়ার পরই তাই চোখ কপালে উঠলো অনেকের।

অবশ্য এতে একটি বার্তা ছিলো পরিষ্কার। আফগানিস্তানকে পুরোপুরি স্পিন বিষেই নীল করতে চায় বাংলাদেশ। গত বছরের নভেম্বরে যেমনটা করা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। চট্টগ্রামে খেলা সবশেষ টেস্টে একমাত্র পেসার হিসেবে বাংলাদেশ দলে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু তার হাত ঘোরানোর সুযোগ মিলেছিল ২টি করে মোটে ৪ ওভার।

সে অভিজ্ঞতা থেকেই, আজ সাগরিকায় স্পিন উইকেট বানিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে কোনো পেসার না নিয়েই খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। এ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিলো টসে জিতে আগে ব্যাটিং করা, যেমনটা করা গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে ম্যাচে।

Advertisement

কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) আর টসভাগ্য আসেনি সাকিব আল হাসানের পক্ষে। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো দলকে নেতৃত্ব দিতে নেমে, টস জেতেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। সঙ্গে সঙ্গে সাকিবকে রাজ্যের হতাশায় ডুবিয়ে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ড গড়া রশিদ।

আর সেখান থেকেই যেন পিছিয়ে যাওয়ার শুরু বাংলাদেশের। কেননা ফ্রেশ উইকেটে প্রথম ঘণ্টার যে ম্যুভমেন্ট, তা কাজে লাগানোর জন্য কোনো পেসারই যে নেই টাইগার অধিনায়কের হাতে। তাই বাধ্য হয়েই নতুন তাইজুল ইসলামের সঙ্গে নিজেই শুরু করেন আক্রমণ। কিন্তু এক ওভার করার পরই নিজেকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন সাকিব, ডেকে নেন ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে।

তাইজুল-সাকিবের দুই ওভারের জুটির পর শুরু হয় তাইজুল-মিরাজের স্পেল। এখানেও মিরাজকে খুব বেশি করাননি সাকিব। একপ্রান্তে তাইজুলকে টানা ২৫ ওভার পর্যন্ত বোলিং করিয়ে, অপর প্রান্তে ঘুরে ফিরে করেছেন সাকিব, মিরাজ ও নাঈম হাসান। আর দিন শেষে সফলতা পেয়েছেন কেবল তাইজুল ও নাঈম ২টি করে। অন্য উইকেট দলের পঞ্চম স্পিনার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝুলিতে।

উইকেট যেমন দেখা গিয়েছে, তাতে পেসারদের হয়তো করার ছিলো না কিছুই। সে কারণেই কোনো ফাস্ট বোলার না নিয়ে, পুরোপুরি স্পিন দিয়েই সাজানো হয়েছে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ। তবু আফগানরা ৫ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান করে ফেলেছে প্রথম দিনেই। অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এরই মধ্যে যোগ হয়েছে ৭৪ রান। অভিজ্ঞ আসগর আফগান ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ইনিংসে অপরাজিত রয়েছে ৮৮ রান করে, উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান আফসার জাজাইয়ের সংগ্রহ ৩৫ রান।

Advertisement

দ্বিতীয় দিন সকালে ৪০০ ছুঁইছুঁই যে কোনো সংগ্রহের জন্য এ দুই ব্যাটসম্যানের দিকেই তাকিয়ে থাকবে আফগানিস্তান। অন্যদিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে রয়েছে অলৌকিক কিছুর জন্য। যেমনটা দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বলে গেলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল।

আফগানরা প্রথম দিনে বেশি রান করে ফেলেছে কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তার ভাষ্য, ‘দেখুন, আগামীকাল (শুক্রবার) ১০ রানেই যদি ৫ উইকেট ফেলে দেই আমরা? ক্রিকেটে এমন মিরাক্কল যে হয় না, তা নয়। আমাদেরও তেমন কিছু করতে হবে। নাঈম যেমন দুই বলে দুই উইকেট (আসলে এক ওভারে দুই উইকেট) নিয়ে গেল, তেমনি দ্রুত ওদের আউট করতে হবে। তবে ম্যাচ এখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে বলবো আমি।’

তাইজুল যতোই বলুক ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এখনও বাংলাদেশের হাতে, বাস্তবতা বলছে অনেক কিছুই ঠিক করে দেবে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন। কেননা উইকেট যদি বাংলাদেশের প্রত্যাশা মোতাবেক স্পিন সহায়ক হয়, তাহলে চতুর্থ ইনিংসে আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে।

কেননা আসগর আফগান ও আফসার জাজাইয়ের জুটিতে যদি প্রথম ইনিংসেই ৪০০'র কাছাকাছি সংগ্রহ পেয়ে যায় সফরকারীরা, তাহলে ব্যাটিং করতে নেমে কাজটা মোটেও সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য। এর সঙ্গে আবার যোগ হবে ভাঙা উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করার চাপ।

প্রসঙ্গত, শুধু বাংলাদেশই যে চার স্পিনার নিয়ে খেলছে তা নয়! সমান ৪ জন স্পিনার রয়েছে আফগান একাদশেও। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার রশিদ খানসহ আছেন অফস্পিনার মোহাম্মদ নবী, বাঁহাতি চায়নাম্যান জহির খান ও তরুণ লেগস্পিনার কাইস আহমেদরা। দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের ব্যাটম্যানদের নাকানি চুবানি খাইয়েছেন জহির খান। যা তাকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে এ টেস্টেও।

আফগানিস্তানের স্কোয়াডে এমন বৈচিত্র্যময় স্পিনারদের সমাহার থাকার পরেও, স্পিন উইকেট বানিয়ে নিজেরা অল স্পিন অ্যাটাকে যাওয়ার পরিকল্পনা কতটা যৌক্তিক হলো, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে তাইজুলের মতে, এমন পেসার ছাড়া বা কম পেসার নিয়ে আগেও খেলেছে বাংলাদেশ। যা কি-না দলের জন্য নতুন কিছু নয়।

কিন্তু আগের ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ দলেও এমন স্পিন সমাহার ছিলো না কখনোই। যা কি-না সহজ করেছে ব্যাটসম্যানদের কাজ। যা অনুপস্থিত এবার। এর সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের চিরায়ত নিয়ম অনুযায়ী, যতই খেলা গড়াবে উইকেট ততই হবে স্পিন সহায়ক- এমনটা হলে ম্যাচের সামনের সময়টা বাংলাদেশ দলের জন্য অশনি সংকেতই দিচ্ছে বটে।

এসএএস/এমএমআর/পিআর