ধর্ম

জুমআর দিনের যে কাজগুলোর ফজিলত ও মর্যাদা বেশি

মুসলমানদের সপ্তাহিক ইবাদতের দিন ইয়াওমুল জুমআ তথা শুক্রবার। এ দিন মুসলিম উম্মাহ জুমআর নামাজ আদায়ের জন্য নিজেদের আগে থেকেই প্রস্তুত করে নেয়। জুমআর দিন, আগেও ওপরে এমন কিছু কাজ রয়েছে যে গুলো মেনে চলা জরুরি। আর তাতে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও সাওয়াব।

Advertisement

মুসলিম উম্মাহ প্রত্যেক শুক্রবার জোহরের সময় জুমআর নামাজ আদায় করে থাকেন। জুমআর দিনের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা লাভে যথাসময়ে এ কাজগুলো আদায় করা। আর তাহলো-

>> নখ-মোচ ও অযাচিত পশম কাটাপ্রত্যেক বৃহস্পতি কিংবা শুক্রবার জুমআর নামাজের আগে উভয় হাত-পা-এর নখ, মোচ, মাথর চুল (বড় হলে) বগল ও নাভীর নিচের অযাচিত লোকগুলো কেঁটে ফেলা।

>> সুরা কাহফ পড়াজুমাআর দিন নামাজের আগে কিংবা পরে সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। এ নামাজ অনেক ফজিলতপূর্ণ। হাদিসে এসেছে-

Advertisement

- হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।

- হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সব ধরণের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জালও বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।

- অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘এক জুমআ থেকে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা ছোট গোনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য যে, কবিরা গোনাহ তওবাহ করা ছাড়া মাফ হয় না।’

>> দোয়া করাজুমআর দিনের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট না করা। কেননা জুমআর দিন একটি সময় আছে যে সময়ের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেন। এর মধ্যে অন্যতম সময় হলো আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়।

Advertisement

>> গোসল করাজামআর নামাজের জন্য উত্তমরূপে গোসল করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে জুমআর নামাজ পড়বে সে যেন গোসল করে নেয়।

>> মেসওয়াক করাজুমআর দিন নামাজের আগে উত্তমরূপে মেসওয়াক করা। অর্থাৎ জামআর নামাজের উদ্দেশ্যে একটু সময় নিয়ে মেসওয়াক করা। যাতে মুখ থেকে কোনো দুর্গন্ধ বের না হয়।

>> পরিচ্ছন্ন পোশাক পড়াজামআর নামাজ পড়তে উত্তম ও পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড় পরা। জামা-কাপড় পরিপাটি হওয়া।

>> সুগন্ধি ব্যবহারজুমআর নামাজের উদ্দেশ্যে গোসল করে উত্তম পোশাক পরে সুগন্ধি ব্যবহকার করা।

>> মসজিদে যাওয়াজুমআর দিন আগে আগে মসজিদে যাওয়া আবশ্যক। কেননা যে যত আগে মসজিদে যাবে তার জন্য রয়েছে তত বড় ফজিলত। যা উট কুরবানির সাওয়াব দিয়ে শুরু হয়। যার শেষ হয় একটি ডিস সাদকার সাওয়াব দিয়ে।

>> জুমআর নামাজযথাসময়ে জুমআর নামাজ আদায় করা। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদাররা! যখন জুমআর দিন নামাজের জন্য আহ্বান করা। তখন তোমরা ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর স্মরণে (দ্রুতগতিতে মসজিদের দিকে) ধাবিত হও।’

>> বেশি বেশি দরূদ পড়াজুমআর দিন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরূদ পড়া আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-

হজরত আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের সবদিন অপেক্ষা জুমআর দিনটিই হলো শ্রেষ্ঠ। এ দিনে হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিনেই বিশ্ব ধ্বংসের জন্য শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং এ দিনের পুনর্জীবিত করার জন্য দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়া হবে। আর এ দিন তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর।

তোমাদের দরূদ নিশ্চয় আমার কাছে উপস্থিত করা হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দরূদ আপনার কাছে কেমন করে উপস্থিত করা হবে অথচ আপনি তখন মাটি হয়ে যাবেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, ‌আল্লাহ তাআলা নবিদের শরীর জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)

>> মসজিদে হেঁটে যাওয়াজুমআর দিন মসজিদে হেঁটে হেঁটে যাওয়া। বাড়ি থেকে মসজিদের দূরত্ব যতবেশি মসজিদে গমনকারী ওই ব্যক্তির জন্য ততবেশি ফজিলত। কেননা মসজিদের দিকে প্রতিটি পদক্ষেপে বান্দার গোনাহ ক্ষমা করা হয় এবং পদমর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। হাদিসে এসেছে-

>> ইমামের খোতবা শোনাজুমআর দিন গুরুত্বসহকারে ইমামের খোতবা শোনা জরুরি। ইমামের খোতবার সময় নিশ্চুপ থেকে খোতবা শোনার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। এমনকি কোনো ব্যক্তি যেন অন্যের কথার বলার সময় তাকে ‘চুপ করুন’ শব্দও না বলে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিনের ফজিলত ও সাওয়াব লাভে উল্লেখিত কাজগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/পিআর