খেলাধুলা

বাংলাদেশ-আফগান টেস্টে স্পিনে স্পিনে যুদ্ধ

২০০০ সালে টেস্ট অভিষেকের পর হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ এই আঙিনায় এখন ১৯ বছরের টগবগে তরুণ। অন্যদিকে আফগানিস্তান মাত্র সদ্যভূমিষ্ঠ টেস্ট নবজাতক। মাত্র দুটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির। বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ১১৪টি।

Advertisement

এই পর্যায়ে এসে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টেস্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শুরু হয়ে যাবে রঙিন বল আর সাদা পোশাকের লড়াই।

একটি মোটামুটি অভিজ্ঞ দলের সঙ্গে পুরোপুরি নবীন একটি দলের এই লড়াই নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যে ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে তুমুল আগ্রহ। রশিদ খানের দলের সঙ্গে কেমন করবে বাংলাদেশ? চট্টগ্রামের লাকি ভেন্যুতে না আবার পা হড়কে যায় টাইগারদের! অজানা শঙ্কায় মন দুরু-দুরুও করতে শুরু করেছে টাইগার ভক্তদের।

তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বেশ আত্মবিশ্বাসী এবং মাথা উঁচু করেই আফগান চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বকাপ এবং এর পরবর্তী সময়টাতে যে খারাপ অবস্থায় দিন পার করছে বাংলাদেশ, তা থেকে বের হয়ে আসারও জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। জানিয়েছেন, আফগানদের বিপক্ষে এই টেস্টে জয়টা হতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বাভাবিক পথ চলার শুরু।

Advertisement

সাকিব আল হাসান বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ দল ছাড়া, যারা একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে, বাকিরা আমরা খুব বাজে একটা সময় কাটাচ্ছি। না জাতীয় দল, না ‘এ’ দল- কেউ ভালো খেলতে পারছে না গত কয়েক মাস ধরে। যদি আমরা এই ম্যাচটা জিততে পারি, তাহলে সেটা হবে আমাদের স্বাভাবিক পথ চলার শুরু।’

চট্টগ্রামে যতই আফগানদের সঙ্গে লড়াইয়ের আভাস থাকুক না কেন, আবহাওয়া পূর্বাভাস কিন্তু বেশ চোখ রাঙাচ্ছে। পুরো ম্যাচজুড়েই দারুণ একটি খেলা তৈরি করতে পারে বৃষ্টি। সুতরাং, আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি মাথায় নিয়েই বৃহস্পতিবার সকালে টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে দুই দলের ক্রিকেটাররা।

তবে ম্যাচ ঠিকমতো শুরু হোক কিংবা বৃষ্টিবিঘ্নিত থাকুক, চট্টগ্রামের উইকেটটা হতে পারে সত্যিই ব্যাটসম্যানদের জন্য রহস্যজনক। রান তোলা হতে পারে দু’দলের ব্যাটসম্যানদের জন্য খুব কঠিন। কারণ, পুরো ট্র্যাকটাই হতে যাচ্ছে স্পিননির্ভর। দুই দলেই রয়েছেন দুই বিশ্বসেরা স্পিনার। সাকিব আল হাসান এবং রশিদ খান। কাকতালীয়ভাবে দুজনই আবার দুই দলের অধিনায়ক।

সাকিব আল হাসান আবার সর্বশেষ বিশ্বকাপে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা হিসেবে। ব্যাট এবং বল হাতে তিনিই ছিলেন নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের সেরা পারফরমার। এখন তার হাতেই নির্ভর করছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

Advertisement

আফগান দলের জন্য রশিদ খানও সাকিব আল হাসানের মতো। তবে তিনি আফগান দলে অনেকটাই ওয়ানম্যান আর্মি। দলের মূল ব্যক্তি। বল হাতে আফগানদের সবসময় জয়ের নায়ক তিনি। এমনকি লোয়ার অর্ডারে দুর্দান্ত ব্যাটিংও করে থাকেন। ফিল্ডার হিসেবেও দুর্দান্ত তিনি। সাদা বলেই অবশ্য তার এত কৃতিত্ব। রঙিন বলে তো মাত্র দেশেরই যাত্রা শুরু হলো। সামনে কী অপেক্ষা করছে সেটা সময়ই ভালো জানে।

বিশ্বকাপের পর রশিদ খানের ওপর সবচেয়ে বড় দায়িত্ব বর্তেছে। তিনি দলের অধিনায়ক। যে কারণে দলের পুরো দায়-দায়িত্বও এখন তার কাঁধে। অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়েই খেলতে হবে তাকে। সে হিসেবে রশিদ খানের চোখ থাকবে তার ব্যাটসম্যানদের দিকে। রহমদ শাহ, হাশমতউল্লাহ শহিদি, আসগর আফগানদের ওপর তাকে নির্ভর করতে হবে অনেক বেশি।

আফগান ব্যাটসম্যানদের জন্য চার স্পিনার নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং নাঈম হাসান। যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ হোম সিরিজে ৪০ উইকেটের সবগুলোই নিয়েছিলেন। আফগানদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে তাদের ব্যাটসম্যানদের বিগ হিট করার মানসিকতা। যেটা টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ সময়ে ধৈর্য ধরা খুব কঠিন।

আফগান স্কোয়াডে রশিদ খানের সঙ্গে মোহাম্মদ নবি হবেন মূল বোলার। সঙ্গে তারা দলে নিতে পারে রিস্ট স্পিনার জহির খান এবং লেগ স্পিনার কায়েস আহমেদকে। বাংলাদেশের মতোই চার স্পিনার নিয়ে মূল বোলিং আক্রমণ সাজানোর পরিকল্পনা আফগানদের।

তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের টপ অর্ডার কেমন করে- সেটাই দেখার বিষয়। সে কারণে মিডল অর্ডারে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। এছাড়া মুমিনুল হক এবং লিটন দাসেরও দারুণ ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

আইএইচএস/বিএ