দুচোখ ভরে মায়ের মুখ দেখার আগেই নিকষ অন্ধকার গ্রাস করেছিল শিশুটিকে। জন্মের কদিন পরই নির্মমতার শিকার হতে হয় তাকে। যে সময় মায়ের কোলে থাকার কথা ছিল সে সময় স্বজনদের নিমর্মমতায় তাকে ফেলে রাখা হয় হাসপাতলের সিঁড়িতে। তবে স্বজনরা ফেলে গেলেও মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে গেছে ছোট্ট শিশুটি।
Advertisement
মায়ের কোল না পেলেও মায়ের মতো মমতায় গত ১০ দিন তাকে আগলে রেখেছে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স-আয়ারা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সমাজসেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় আস্তে আস্তে তার মুখে হাসি ফুটে। অবশেষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়ে পুলিশ প্রহরায় ঢাকার আজিমপুরের ছোটমণি নিবাসের নতুন ঠিকানায় যাত্রা করে অবহেলায় ফেলে রাখা নবজাতকটি।
কিশোরগঞ্জে হাসপাতালের সিঁড়িতে কুড়িয়ে পাওয়া ১২/১৩ দিন বয়সী সেই শিশুটিকে আদালতের নির্দেশে ঢাকার আজিমপুরে ‘ছোটমণি নিবাসে’ পাঠানো হয়েছে। বুধবার দুপুরে শিশুটিকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। এ সময় সমাজসেবা অধিদফতরের উপ পরিচালক কামরুজ্জামান খান, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আয়াসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। যাত্রাকালে শিশুটিকে একনজর দেখতে হাসপাতালের সামনে ভিড় করে অসংখ্য মানুষ।
এর আগে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও প্রবেশনাল অফিসার সালমা আক্তারের কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন হাসপতালের উপ পরিচালক ডা. সুলতানা রাজিয়া। এ সময় গত ১০ দিনে শিশুটিকে আন্তরিকভাবে পরিচর্যা করার কথা উল্লেখ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
Advertisement
ডা. সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘এই কদিন মায়ের ভালোবাসা দিয়ে শিশুটিকে পরিচর্যা করা হয়েছে। কয়েকজন নার্স তাদের বুকের দুধ খাইয়েছে। আজ সে চলে যাচ্ছে। তাই খারাপ লাগছে। তবে দোয়া করি, সে যেনো সবার ভালোবাস পেয়ে বেড়ে ওঠে।’
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও প্রবেশনাল অফিসার সালমা আক্তার জানান, আদালতের নির্দেশ মতে শিশুটিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সমাজসেবা বিভাগের দুজন কর্মকর্তা শিশুটির সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট বিকেলে নবজাতক এ শিশুটিকে কাপড়ে মুড়িয়ে জেলা সদর হাসপাতালের সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালেই রাখা হয়। এ সময় শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ জানায় অনেকে। এ অবস্থায় শিশুটির বিষয়ে করণীয় জানতে আদালতে আবেদন করে সমাজসেবা অধিদফতর।
পরে মঙ্গলবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের ১ নং আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল বারী কুঁড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে ঢাকার ছোটমিণি নিবাসে পাঠানোর আদেশ দেন।
Advertisement
নূর মোহাম্মদ/এমবিআর/পিআর