কয়রা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। সব কাজেই অনিয়ম হওয়ায় উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অনেকেই এখন অনিয়মের আখড়া বলে অখ্যায়িত করছেন।
Advertisement
শিক্ষা কর্মকর্তার নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কয়রার শিক্ষক সমাজ ক্ষোভে ফুঁসলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তাদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, কয়রা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেয়ার পরপরই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন আবুল বাশার।
নিয়ম অনুযায়ী পাঁচ শিক্ষক বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজনকে বদলি করা যায়। কিন্তু চার বা তারও কম সংখ্যক শিক্ষক বিশিষ্ট বিদ্যালয় থেকে কাউকে বদলি করতে হলে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে করার নিয়ম আছে। কিন্তু সে নিয়ম উপেক্ষা করে তিনি গত মার্চ মাসে কয়রার বায়লা হারানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসাম্মাৎ শামীমা নাসরিনকে কালনা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেন। এছাড়া একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা রজনীগন্ধা মিস্ত্রিকে একই মাসে ভিন্ন তারিখ দেখিয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যতীন্দ্রনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। যা বদলি নীতিমালা বহির্ভূত। ওই স্কুলে পাঁচজনের স্থলে আছেন তিনজন। এরমধ্যে একজনকে ট্রেনিংয়ের জন্য পিটিআইতে পাঠানো হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন স্কুল থেকে বিধি বহির্ভূত বদলি ও ডেপুটেশন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন আবুল বাশার।
Advertisement
উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আংটিহারায় আছেন একজন, গোলখালীতে দুইজন, তিন নম্বর কয়রায় একজন, ঘড়িলালে তিনজন এবয় খাসি টানায় দুইজন শিক্ষক। অথচ তথ্য গোপন করে আবুল বাশার বিধি বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক বদলি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তড়িঘড়ি করে শূন্যপদ পূরণের জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে জোর করে শিক্ষকদের দূরবর্তী বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে তিন নম্বর কয়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে। ওই বিদ্যালয়ে দুই শিক্ষককে একই সঙ্গে বছর ডিপিএড প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বিল ছাড়ের জন্য দিতে হয় মোটা অংকে টাকা। দূরবর্তী বিদ্যালয়ে বদলি অথবা ডেপুটেশনের ভয়ে এ শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।
তিনি শ্যামনগর, সাতক্ষীরায় থাকাকালীন এহেন কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মারপিটের শিকার হয়েছিলেন।
Advertisement
জুন ২০১৯ অর্থবছরে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সব টাকা এমনকি শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা এবং বিদ্যালয়ের কন্টিজেন্সি বিল নিজ একাউন্টে রেখে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হন। পরবর্তীতে উপজেলা চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়গুলির একাউন্টে অর্থ জমা দিতে বাধ্য হন।
এদিকে জনবল সংকটে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ১০ জনের স্থলে আছেন মাত্র ৫ জন। ওই ৫ জনের মধ্যে শিক্ষা কর্মকর্তা প্রতি সোমবার অফিসে এসে বুধবার বাড়ি চলে যান। সপ্তাহে চারদিন তিনি অনুপস্থিত থাকায় প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন বেহাল অবস্থায় ধাবিত হচ্ছে। তিনি কতিপয় দালালের মাধ্যমে অফিস পরিচালনা করেন।
এ ব্যাপারে দুইজন সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাশার বলেন, বদলি করা ডিপিও এবং ডিডি স্যারের বিষয়, এখানে আমার কোনো হাত নেই। সপ্তাহে চার দিন অনুপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বাড়িতে একটু ঝামেলার কারণে মাঝে একটু অনুপস্থিতি থাকলেও বর্তমানে ঠিকমতো অফিস করছি ।
জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম সিরাজ উদ দোহা বলেন, বিষয়গুলো আমার জানা ছিল না। অভিযোগের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আলমগীর হান্নান/এমএমজেড/এমকেএইচ