দেশজুড়ে

আখাউড়া স্থলবন্দরে রফতানি কমছেই

দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রফতানিমুখী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রফতানির পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় মাছ, পাথর, সিমেন্ট, প্লাস্টিক ও ভোজ্য তেলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য রফতানি করা হত। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যতায় মুখর থাকত পুরো স্থলবন্দর এলাকা। কিন্তু ত্রিপুরার সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে এখন আর সেই কর্মচাঞ্চল্যতা নেই। বাংলাদেশ থেকে আগের মতো পণ্য নিতে চান না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এর ফলে প্রতি অর্থবছরেই কমছে পণ্য রফতানির পরিমাণ।

Advertisement

বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্য স্বল্প পরিমাণে রফতানি হচ্ছে আগরতলায়। এ অবস্থায় স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে ভারত থেকে চাহিদা সম্পন্ন সকল বৈধ পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানির অনুমতি দিলে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি সরকারও পাবে রাজস্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্ধারিত কিছু পণ্য আমদানির অনুমতি থাকলেও প্রতিষ্ঠার পর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর ও ব্যবসায়ীরা রফতানি বাণিজ্যের মাধ্যমেই টিকে আছে। ২০১০ সালের ১৩ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর আমদানি-রফতানি কার্যক্রম অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়। প্রতিদিন কয়েকশ পণ্যবাহী ট্রাক আগরতলা প্রবেশ করত। এর মধ্যে পাথর ও মাছের ট্রাকই ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে এখন অনান্য রাজ্যগুলোর সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন আগরতলার ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ থেকে আমাদানি খরচ বেশি হওয়ায় নিজেদের দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে পণ্য সংগ্রহ করছেন তারা। সবচেয়ে বেশি চাহিদা সম্পন্ন পাথরও এখন শিলং থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর নানা অজুহাতে মাছ রফতানি কার্যক্রম থমকে আছে দীর্ঘদিন ধরে।

বর্তমানে তিন-চারটি পণ্য রফতানি হয়ে থাকে আগরতলায়। এই রফতানির পরিমাণও অনেক কম। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম। এতে করে বেকার হয়ে পড়বেন বন্দরের ব্যবসায়ী-শ্রমিকরা।

Advertisement

আখাউড়া স্থলবন্দরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দিন দিন পণ্য রফতানির পরিমাণ কমে আসছে। আগরতলার ব্যবসায়ীরা আর আগের মতো পণ্য নিচ্ছেন না। তারা এখন বাংলাদেশ থেকে কম খরচে নিজ দেশের অন্য রাজ্য থেকে পণ্য সংগ্রহ করছেন। ব্যবসা কমে যাওয়ায় বন্দরের ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের মাঝে আগের সেই কর্মচাঞ্চল্যতা নেই। যদি সব ধরনের বৈধ পণ্য আমদানি করার অনুমতি না দেয়া হয় তাহলে বন্দরের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আাখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দুই লাখ ১১ হাজার ৫১৭ টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দুই লাখ ৯ হাজার ৯৬২ টন পণ্য ত্রিপুরায় রফতানি করা হয়েছে। এ বন্দর দিয়ে ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ ও শিং মাছ ব্যতীত সকল প্রকার বৈধ পণ্য রফতানির অনুমতি রয়েছে। এর বিপরীতে গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছগাছড়া, বীজ, চাল, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়ানিক সার, পিঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, শুটকি, সাতকড়া ও জিরাসহ ৩১টি পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে। তবে বন্দরের ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের বিপরীতে বাংলাদেশে চাহিদা সম্পন্ন পণ্য আমদানির অনুমতি চান।

আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা জাগো নিউজকে বলেন, যেসব পণ্য আমদানির অনুমতি রয়েছে আমাদের এখানে সেসব পণ্যের চাহিদা নেই। সেজন্য আমরা চাহিদা সম্পন্ন ৩০টি পণ্য নির্ধারণ করে আমদানির অনুমতির জন্য দাবি জানিয়েছি। যদি অনুমতি দেয়া হয় তাহলে বন্দরে আগের সেই কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসবে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি অর্থবছরেই রফতানির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমছে। চলতি অর্থবছরেও রফতানির পরিমাণ কম মনে হচ্ছে। রফতানি বাড়ানোর জন্য দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমদানির বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।

Advertisement

এফএ/জেআইএম