অস্থির ভারত, অস্থির দক্ষিণ এশিয়া। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিধান ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং আসামের ১৯ লাখ বাঙালির নাগরিত্ব কেড়ে নেয়ায় সংকট বাড়ছে ভারতে। নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংখ্যালঘু নির্যাতন বেড়েছে সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশটিতে। হিন্দুত্ববাদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া মোদি সরকার, যার প্রভাব পড়ছে দক্ষিণ এশিয়াতেও।
Advertisement
বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশের মানুষ কাশ্মীর এবং আসামের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আসছে প্রথম থেকেই। তবে বাংলাদেশ সরকার কাশ্মীর ইস্যুকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় বললেও আসাম ইস্যুতে চিন্তিত, যা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের পর কোনো বাংলাদেশি ভারতে বসবাস করতে যায়নি। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেয়া বাঙালিরা সবাই ফেরত এসেছেন।’
আসামে নাগরিকত্বহারা বাঙালিরা বাংলাদেশের জন্য কতটুকু চাপ সৃষ্টি করছে অথবা বাংলাদেশে এর প্রভাব কী পড়তে পারে, সে বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজের কাছে।
Advertisement
ড. তানজিম বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য চাপ অনুভব করাটা খুব স্বাভাবিক। রোহিঙ্গাদের মতো আসামের বাঙালিদেরও পুশইন করতে পারে ভারত। তবে ভয়ের কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে যারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করছেন, তাদের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করছে এমন ঘটনা। এসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ভারতবিরোধীরা আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’
বিজেপি সরকারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘ভারত নিজেদের এখন বিশ্বশক্তি মনে করছে। কিন্তু বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করতে হলে শুধু শক্তি দিয়ে হয় না। মানুষের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। ভারত প্রতিবেশীর সেই সমর্থন অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ভারত যত বেশি হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত হবে, বাংলাদেশ-পাকিস্তানও তত বেশি মুসলমান রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর এমন রাজনীতির মধ্য দিয়েই আলকায়েদা, আইএসের মতো উগ্রবাদী সংগঠনগুলো এক প্রকার নৈতিক সমর্থন আদায় করার ক্ষেত্র পাবে। ভারত নিজেই দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিপদ তৈরি করছে।’
পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি হতে পারে-এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বিশ্লেষক বলেন, ‘বিজেপি যে কোনো মূল্যে তার আধিপত্য বিস্তার করবে। পশ্চিমবঙ্গে মুসলমান বাঙালি ভোটব্যাংক হিসেবে কাজ করে তৃণমূল কংগ্রেসের। বাঙালি মুসলমানদের এভাবে টার্গেট করলে বিজেপি সরকারের জন্য খুবই সুবিধা হয়। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে, এটি খুবই স্বাভাবিক, যা কোনো না কোনোভাবে বাংলাদেশের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।’
অন্যদিকে গবেষক আলতাফ পারভেজ মনে করেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ হয়তো ‘আসামের রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় আসেনি। কারণ ভারত এখনও বলেনি যে, আসামের অবৈধ এ নাগরিকদের বাংলাদেশকে নিতে হবে। আসাম সরকারও বলেনি।’
Advertisement
‘কিন্তু ভবিষ্যতে যে বলবে না, তা তো বলা যাবে না। কারণ ভারতের গণমাধ্যম, গবেষণা, সাহিত্যে সবসময়ই বলা হয় আসামের এসব মানুষ বাংলাদেশি। ভবিষ্যৎ উদ্বেগ বাড়াবে বাংলাদেশের,’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সরকারের নীরবতা প্রসঙ্গে গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের অবস্থান। সরকার এ মুহূর্তে কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাইবে না। যদিও বাংলাদেশের জনগণ ভারত প্রসঙ্গে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। বাংলাদেশ আসলে ভারতের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র শক্তি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে হাবুডুবু খাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত এবং চীনের সমর্থন দরকার। এ কারণেও হয়তো বাংলাদেশ সরকার ভারতের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চায় না।’
এএসএস/এনডিএস/জেআইএম