জাতীয়

ইজিপ্ট এয়ারের সেই বিমান ফেরত দিতেও অনিয়ম!

ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা এয়ারক্রাফট দুটি ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়াতেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (প্রকৌশল) খন্দকার সাজ্জাদুর রহিমের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হয়েছে। একই অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) জি এম ইকবাল।

Advertisement

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, ইজিপ্ট ইয়ারের লিজ প্রক্রিয়ায় অনেক আগে থেকেই বিতর্ক ছিল। এর সঙ্গে জড়িত অনিয়মের অভিযোগে এই প্রথম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রকৌশল বিভাগের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। প্রয়োজনে বিষয়টি অধিকতর তদন্ত করা হবে এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইজিপ্ট এয়ার ফেরত দিতে কী কী অনিয়ম করা হয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি বিমানের পর্ষদ সদস্য।

উল্লেখ্য, মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে ৫ বছরের চুক্তিতে ড্রাই লিজে ২টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ সংগ্রহ করে বিমান বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের মার্চে একটি উড়োজাহাজ (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬৩০) বিমানবহরে যু্ক্ত হয়। অন্য উড়োজাহাজটি (রেজিস্ট্রেশন নম্বর এস২-এএইসকে, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬২৯) যুক্ত হয় একই বছরের মে মাসে।

Advertisement

চুক্তি অনুসারে যাত্রী ঠিকভাবে চলাচল না করলেও উড়োজাহাজ দুটির জন্য বাংলাদেশ বিমানকে মাসে ১১ কোটি টাকা করে দিতে হয়েছে। বহন করতে হয়েছে সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করতে পারবে না বিমান, এমন অসম চুক্তি করে এয়ারক্রাফট দুটি আনা হয়। লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দু’টি আগের অবস্থায় (ভাড়া নেয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল) ফেরত দিতে হবে।

লিজে আনা উড়োজাহাজ দুটির কারণে বিমানের সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির কারণ হিসেবে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুই উড়োজাহাজ লিজ নেয়া এবং মেরামতে চরম অবহেলা ও অনিয়ম করা হয়েছে। উড়োজাহাজ লিজ নেয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুসঙ্গিক কাজে এ সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়, যা দিয়ে একটি নতুন উড়োজাহাজ কেনা যেত।

২০১৪ সালের বিমানবহরে যু্ক্ত হওয়ার এক বছর পরই লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজটির (রেজিস্ট্রেশন নং এস২-এএইসএল, কনস্ট্রাকশন নং ৩২৬৩০) একটি ইঞ্জিন বিকল হয়। পরবর্তী সময়ে ইজিপ্ট এয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ার ইঞ্জিন দিয়ে সচল করা হয় উড়োজাহাজটি। নষ্ট ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় লন্ডনভিত্তিক ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সে। সেই ইঞ্জিন মেরামত করে ফেরত আনার আগেই ৩ বছরের মাথায় আবারও নষ্ট হয়।

তখনও ইজিপ্ট এয়ার থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকায় (১০ হাজার ডলার) ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। বিকল ইঞ্জিনটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাছে। দীর্ঘ চেষ্টার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে লিজে আনা দুটির একটি বিমান ইতোমধ্যে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়েছে।

Advertisement

আরএম/এমএসএইচ/জেআইএম