যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুর পাশেই নেয়া ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের নেই অগ্রগতি। যার ফলে এখনও সড়ক সেতুর উপর অপরিকল্পিতভাবে যুক্ত রেলপথেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর আর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছে এ পথের সকল ট্রেন সার্ভিস।
Advertisement
তবে ওই রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প দৃশ্যমান না হওয়াসহ যুক্ত রেলপথে গতি কমিয়ে রেল চলাচলে এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে এর সড়ক ও রেল সেতু। এতে চরম হুমকির মুখে দাঁড়িয়েছে এ পথের যাত্রী নিরাপত্তা। যদিও প্রকল্প হাতে নেয়ার সাড়ে তিন বছর অতিবাহিত হওয়া স্বত্ত্বেও এখনও শুরু হয়নি প্রকল্পের মূল কাজ। হয়নি ঠিকাদার নিয়োগ। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে এ প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করার আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেতুর এক পাশে টাঙ্গাইল এবং অন্য পাশে সিরাজগঞ্জ। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নতুন এ সেতুর অবস্থান হবে। যমুনা নদীতে বিদ্যমান সেতুর সমান্তরাল পৃথক একটি নতুন রেলসেতু নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। রেল সেতুটি নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটি করার জন্য ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ নির্মাণ করা হবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। তবে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা ঋণ দিতে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে জাইকা।
Advertisement
একই সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া চলমান প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথাও রয়েছে।
এ সূত্রে আরও জানায়, যমুনায় নতুন রেলসেতু নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। মহাসড়কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চার লেনের সেতুটি হবে ডুয়েলগেজ। এতে ওয়াগন ও কন্টেইনার বাল্ক অধিক পরিমাণে বহন করা যাবে। সেতুর বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) এবং বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্টে (বিবিডব্লিউ) স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগনালিং সিস্টেম থাকবে। সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও থাকবে।
এ নিয়ে বিবিএ’র বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির বাপ্পি জাগো নিউজকে জানান, সেতুর নিরাপত্তা ও স্থায়ীত্বের কথা বিবেচনা করে সেতুতে গতি কমিয়ে রেল চলাচল করার জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়। এরপর থেকে সেতুতে ধীরগতিতে রেল চলাচল করছে। তবে এখনও রেলসেতু নির্মাণের কাজ প্রাথমিক পর্যায়েই রয়ে গেছে। অগ্রগতি নেই বলেই প্রকল্পটি এখনও হয়নি দৃশ্যমান।
তিনি আরও বলেন, পৃথক রেল সেতুটি নির্মিত হলে যাত্রাপথ ঝুঁকিমুক্ত তো হবেই সঙ্গে রক্ষা পাবে বঙ্গবন্ধু সেতু। এছাড়াও পৃথক রেলসেতু হয়ে গেলে সড়ক সেতুতে অপরিকল্পিতভাবে যোগ করা রেলপথটি বন্ধ করে দেয়া হবে। এর ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যুক্ত হবে দ্রতগামী রেল সুবিধা।
Advertisement
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন জানান, যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচলের অনেক আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপরই সেতুতে শুরু হয় ট্রেন চলাচল। গতি কমানোর জন্য সেতুতে কন্ট্রোলারও ব্যবহার করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, পৃথক রেলসেতু নির্মাণে রয়েছে নানাবিধ কারণ। এ রেলসেতুটি তৈরি হবে স্টিলে। এর নির্মাণ সম্পন্ন হলে বিদম্যান সেতুর স্থায়ীত্ব বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক কামরুল আহসান জানান, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি এখনও বলার মতো হয়নি। এখনও এর ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়নি। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করার পরিকল্পনায় কাজ চলছে। এছাড়াও হাতে নেয়া প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি, সার্ভে ও পরামর্শক নিয়োগের কাজে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন বছর। স্টিলে নির্মাণাধীন রেল সেতুটির মূল কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এমএএস/জেআইএম