লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে খাল ও জলাশয় পুনঃখননে কৃষিজমি ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বিরুদ্ধে।
Advertisement
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন খালের দু’পাশে এক হাজারেরও বেশি গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়ে গেছে খননকারীরা। এমনকি খাস জমি রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমিতে খাল-খনন করা হয়েছে। এ অবস্থায় খাল পুনঃখনন করা মাটি দিয়ে পাশের কৃষিজমি ভরাট রহস্যের কূল-কিনারা পাচ্ছে না কৃষকরা। ভুক্তভোগীদের দাবি খাল ও জলাশয় পুনঃখননে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি খনন করছে পাউবো। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আদালতের আশ্রয় নিয়ে ঠিকাদার ও পাউবোর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেছেন।
তাদের অভিযোগ, কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীখাতা মৌজার এক একর ৯০ শতাংশ জমি পৈতৃক ও কবলা সূত্রে মালিকানা হিসেবে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ভোগদখল করছেন উপজেলার গেগরা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী খন্দকারের নাতি শফিকুল ইসলাম খন্দকার, আসাদুজ্জামান খন্দকার ও আনোয়ারুল ইসলাম খন্দকার। ব্যক্তি মালিকানা হিসেবে ওই জমির ভূমি উন্নয়ন করও পরিশোধ করেন তারা। জমিটির উত্তর পাশে ভেটেশ্বর খাল রয়েছে। আর ওই জমির ফসলই তাদের উপার্জনের একমাত্র পথ। সম্প্রতি সেই জমিতে লাল নিশানা টানান পাউবোর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ইউএনও এবং জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে কয়েক দফায় অভিযোগ করে তদন্তের দাবি জানলেও কেনো প্রতিকার পাননি।
অপরদিকে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের মোটা অঙ্কের টাকার জোরে তদন্তের অজুহাতে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ করে খাল পুনঃখনন চালিয়ে যায় প্রশাসন। কোনোরূপ নোটিশ ছাড়াই পাউবোর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা মূল খালের উত্তরে থাকা প্রভাবশালী ভূমি মালিকদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে খালটি খাস জমি থেকে দক্ষিণে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে সরিয়ে নেয়। ফলে প্রভাবশালীরা খাস জমির মালিক বনে যান।
Advertisement
পাউবো সূত্রে জানা গেছে এক কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে ৮ কিলোমিটার র্দীঘ এই খাল পুনঃ-খনন করছে মেসার্স তাজুল ইসলাম নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। পাউবোর কর্মকর্তারা স্থানীয়দের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার মামলার হুমকি দিয়ে জোরপূবর্ক ৩০০ মেহগনি গাছ, বাঁশ বাগান ও ফসলি জমির উপর ভেকু মেশিন দিয়ে খাল খনন করে আগের খাল ভরাট করে প্রভাবশালীদের দখলে দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম খন্দকার বলেন, রেকর্ড, দলিল, নামজারি ও খাজনা সব আমাদের নামে। অথচ পাশে খাস জমি রেখে পুরাতন খাল ভরাট করে আমাদের ফসলি জমিতে খাল পুনঃ-খনন করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালীরা খালটি সরিয়ে খাস জমি নিজেদের দখলে নিয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলের তদন্ত দাবি করেন তিনি।
এ ব্যপারে জানতে কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) আবু সাঈদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কৃষকদের অভিযোগটি সার্ভেয়ারকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। সার্ভেয়ার একাই দুই স্টেশনে দায়িত্ব পালন করায় তদন্ত করতে পারেননি। তবে দ্রুত তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে লালমনিরহাট পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিটন আলী বলেন, খালের পানি রক্ষায় যে স্থান সহজতর হবে সেখানে খালটি খনন করা হয়েছে। তবে কারও ব্যক্তিগত জমিতে নয়, খনন হয়েছে ১ নং খতিয়ান ভুক্ত খাস জমিতে। তবে সেই জমির ভূমি উন্নয়ন কর কেন ভূমি অফিস নিয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা ভূমি অফিসের বিষয়।
Advertisement
রবিউল হাসান/এমএমজেড/এমকেএইচ