আইন-আদালত

ডাক্তার স্বামীর আত্মহত্যা, স্ত্রীর জামিন স্থগিতে আবেদন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তফা মোরশেদ আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় দায়ের করা প্ররোচনা মামলায় তার স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়েছে।

Advertisement

গত ২৮ আগস্ট স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে স্থায়ী জামিন দেন হাইকোর্ট।

সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিতুর জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এ আবেদন করেন। পরে জামিন স্থগিতের বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিতের আবেদনটি শুনানির জন্য উঠলে আদালত ‘নট টুডে’ (আজ শুনানি নয়) বলে আদেশ দেন।

সোমবার আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন মিতুর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।

Advertisement

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল সাংবাদিকদের বলেন, আজ চেম্বার জজ আদালতে মিতুর জামিন স্থগিতের আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল। আদালত ‘নট টুডে’ (আজ নয়) বলে আদেশ দেন। আশা করছি, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর মিতুর জামিন স্থগিতের আবেদনটি চেম্বার আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গত ২৮ আগস্ট স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে স্থায়ী জামিন দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে রুলসহ আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি কাজী ইজহারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। ওইদিন হাইকোর্টের জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মির্জা মো. সোয়েব মুহিত।

গত ৩১ জানুয়ারি সকালে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় মোস্তফা মোরশেদ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের শিরায় বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেন। তার আগে স্ত্রীর সঙ্গে অন্য পুরুষের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন রাতে চিকিৎসক দম্পতির মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার রাত ৪টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান তানজিলা।

পরে স্ত্রীর সমালোচনা করে স্বামী মোস্তফা মোরশেদ ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘আমাদের দেশে তো ভালোবাসায় চিটিংয়ের শাস্তি নেই। তাই আমিই বিচার করলাম আর আমি চিরশান্তির পথ বেছে নিলাম।’

Advertisement

ওইদিন রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরের নন্দনকানন এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তানজিলাকে আটক করে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মোস্তফা মোরশেদের স্ত্রী, শ্যালিকা, দুই বন্ধুসহ ছয়জনকে আসামি করে ১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন চিকিৎসকের মা জোবেদা খানম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা মানসিক যন্ত্রণা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করায় আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে মৃত্যুর মুখে পড়েন মোস্তফা মোরশেদ।

২০০৯ সালে তানজিলার সঙ্গে মোস্তফার প্রেমের সম্পর্ক হয়। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে আসা–যাওয়ার মধ্যে থাকেন তানজিলা। কিন্তু বিয়ের আগে ও পরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। মোস্তফা বিষয়টি জানার পর তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জানান। তবে তারা শোধরানোর উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো মোস্তফাকে শাসাতে থাকেন। তানজিলার বোন সানজিলা যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানাভাবে মোস্তফাকে হুমকি দিয়ে মানসিক যন্ত্রণা দিতে থাকেন।

মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হন মিতু। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। জামিন শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দিলেন।

এফএইচ/এমএআর/জেআইএম