বিশেষ প্রতিবেদন

কাদের না রওশন?

দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকেই জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর পক্ষে দলটির ‘কাদেরপন্থী’ নেতারা। অন্যদিকে অভিজ্ঞতার কারণে নিজেদের পাল্লা ভারী বলে দাবি করছেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদপন্থী নেতারা।

Advertisement

৩০ ডিসেম্বরের ভোটে ২২ আসন পেয়ে সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৬ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি পায় মাত্র ৫টি আসন।

গত ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হয়। তবে একটি পদে ছোট ভাই থাকবেন বলে সাংগঠনিক নির্দেশ দিয়ে যান এরশাদ। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ জুলাই দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা জি এম কাদের-কে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলে ঘোষণা দেন।

Advertisement

এখন প্রশ্ন উঠেছে, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন? এমন প্রশ্নে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যাতে পার্টিতে কোনো বিভেদ সৃষ্টি না হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। পার্লামেন্টারি পার্টি অথবা পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, এটা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ম্যাডামই হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতা। উপনেতা কেউ হচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ম্যাডাম বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

Advertisement

ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও বলেন, ‘বাস্তব সত্য কথা হলো, আওয়ামী লীগের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আওয়ামী লীগের বাইরে দল-কে যেতে দেব না। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এখনও সংসদ নেতার সঙ্গে জাতীয় পার্টির শীর্ষ ওই দুই নেতার কোনো প্রকার কথা হয়নি বলে জানা গেছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক প্রেসিডিয়াম সদস্য, যিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যত দূর খবর পেয়েছি  প্রধানমন্ত্রী ম্যাডামের পক্ষেই আছেন।’

কাদেরপন্থী এক প্রেসিডিয়াম সদস্যও নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে গোলাম মোহাম্মদ কাদের সাহেব জাতীয় পার্টিতে ভাঙন চান না। তবে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে উনি বোধ হয় একটু কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। একটু অপেক্ষা করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমার যতটুকু ধারণা, বিরোধীদলীয় নেতার পদটা ম্যাডামই পাবেন। কাদের সাহেব দল চালাবেন।’

গত ১৭ আগস্ট ৩৫ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে জাতীয় পার্টির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দলটির বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের-কে বিরোধীদলীয় নেতা বানানোর প্রস্তাব করেন।

সভায় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘পার্টির গঠনতন্ত্র মোতাবেক পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের-কেই বিরোধী দলের নেতা বানানো প্রয়োজন।’

পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পার্টির সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পার্টির গঠনতন্ত্র মোতাবেক পার্টির চেয়ারম্যান যেকোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান চাইলে বিরোধী দলের নেতা হতে পারেন।’

প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘জি এম কাদের-কে বিরোধী দলের নেতা বানানো উচিত। কারণ, তার সঙ্গে পার্টির তৃণমূলের সম্পর্ক রয়েছে। আর পার্টির চেয়ারম্যান বিরোধী দলের নেতা হবেন- এটাই স্বাভাবিক।’

এইউএ/এমএআর/এমকেএইচ